প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসস্থনদরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । ১৭৭৩ কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। পরে মা বলিলেন তোমার ছোট ভাই সে সকল কথা বুঝে তোমার বুদ্ধি নাই কিছুই বুঝ না। এস আমি তোমাকে ভাল করিয়া বুঝাইয়া দিতেছি। মা এই বলিয়া আমাকে কোলে বসাইয়া বলিতে লাগিলেন । তৃতীয় রচনা। আমার মা বলিলেন এই যে আমাদের দালানে ঠাকুর আছেন র্তাহার নাম দয়ামাধব তিনি ঠাকুর। কল্য তোমাদের যে লোক নদীর কুল হইতে কোলে করিয়া বাটতে আনিয়াছিল সে মানুষ। তখন আমি বলিলাম মা তুমি বলিয়াছিলে ভয় হইলে দয়ামাধবকে ডাকিও। আমাদের দয়ামাধব আছেন। তবে যে কালি যখন ভয় হইল আমরা দয়ামাধব দয়ামাধব বলিয়া কত ডাকিলাম আইলেন না কেন। মা বলিলেন ভয় পাইয়া কন্দিতে কান্দিতে দয়ামাধব দয়ামাধব বলিয়া ডাকিয়াছিলে । দয়ামাধব তোমাদের কান্না শুনিয়া ঐ মানুষ পাঠাইয়া দিয়া তোমাদিগকে বাটীতে আনিয়াছেন। আমি তখন মাকে জিজ্ঞাসা করিলাম মা দয়ামাধব দালানে থাকিয়া কেমন করিয়া আমাদের কান্না শুনিলেন। মা বলিলেন তিনি পরমেশ্বর তিনি সৰ্ব্বস্থানেই আছেন এ জন্ত শুনিতে পান। তিনি সকলের কথাই শুনেন। সেই পরমেশ্বর আমাদিগের সকলকেই স্বষ্টি করিয়াছেন। র্তাহাকে যে যেখানে থাকিয়া ডাকে তাহাই তিনি শুনেন। বড় করিয়া ডাকিলেও তিনি শুনেন ছোট করিয়া ডাকিলেও শুনেন। মনে মনে ডাকিলেও তিনি শুনিয়া থাকেন। এ জন্ত তিনি মানুষ নহেন পরমেশ্বর। তখন আমি বলিলাম মা সকল লোক যে পরমেশ্বর পরমেশ্বর বলে সেই পরমেশ্বর কি আমাদের। মা বলিলেন হা । ঐ এক পরমেশ্বর সকলেরি সকল লোকেই তাহাকে ডাকে তিনি আদি কৰ্ত্তা। এই পৃথিবীতে যত বস্তু আছে তিনি সকল স্বষ্টি করিয়াছেন তিনি সকলকেই ভালবাসেন তিনি সকলেরি পরমেশ্বর । বাস্তবিক পরমেশ্বর যে কি বস্তু তাহা আমি এ পর্য্যন্ত বুঝিতে পারি নাই। সকল লোক পরমেশ্বর পরমেশ্বর বলে তাহাই শুনিয়া থাকি এই মাত্র জানি। মা বলিলেন তিনি ঠাকুর এ জন্য সকলের মনের ভাব জানিতে পারেন। মীর ঐ কথা শুনিয়া আমার মন অনেক সবল হইল। বিশেষ সেই দিবস হইতে আমার বুদ্ধির অঙ্কুর হইতে লাগিল। আর পরমেশ্বর যে আমাদের ঠাকুর তাহাও আমি সেই দিবস হইতে জানিলাম। আর আমার মনে অধিক ভরসা হইল। পরমেশ্বরকে মনে মনে ডাকিলেও দয়ামাধব কে ? -
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।