প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসম্বন্দরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । কিছু বল এই ভয়ে পলাইয়াছে। ঐ কথা শুনিয়া পিসী হাসিতে হাসিতে ঘর হইতে আমাকে কোলে করিয়া আনিয়া বলিলেন তুমি কি এখন কায করিতে পার কার্য কোথায় শিথিয়াছ। খুড়ীমা বলিলেন মেয়েত বেশ কাষ জানে। আমি হাত পায়ের বেদনাতে নড়িতে পারি না ঐ আমার সকল কায করিয়া দেয়। আমি উহার জন্তেই বাচি । পিলী শুনিয়া ভারী সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে কোলে লইয়৷ আমাদের বাটীতে গিয়া বলিতে লাগিলেন তোমরা শুনিয়াছ এই মেয়ে কত কায শিখিয়াছে। ও বাড়ীর বেী রস বাতে মরে কোন কায করিতে পারে না সে বলিল তাহার সকল কাষ এমন কি রান্না পৰ্য্যন্ত এই মেয়ে করিয়া দেয়। আমাদের বাটীর সকলে শুনিয়া হাসিতে লাগিল আমার মা আমাকে কোলে লইয়া আহলাদে ভাসিতে লাগিলেন। আমাকে বলিলেন মা কাষ কোথা শিথিয়াছ কায করিয়া একবার দেখাও দেখি। তখন আমি আমাদের বাটতেও কায করিতে আরম্ভ করিলাম। সেই হইতে আমি বাটীর কায করিতাম। কিন্তু আমাদের বাটীতে আমাকে কেহ কায করিতে দিতেন না। আমি গোপনে গোপনে কায করিয়া রাখিতাম তাহা দেখিয়া সকলে সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে কত সোহাগ করিতেন। সেই হইতে আমার ধূলাখেল ভাঙ্গিল । আর খেলা ছিল না আমি কেবল কাৰ্যই করিতাম । এইরূপে সংসারের সমুদায় কাষ শিখিয়াছি। দুই বৎসর পর্য্যন্ত আমি ঐ বাটতে খুড়ীমার কাছে সেই ছেলেটা লইয়া সমস্ত দিন থাকিতাম। ছেলেট আমার কাছে থাকিতে থাকিতে আমার ভারী অনুগত হইল। আমিও তাহাকে এক তিল ছাড়িয়া থাকিতে পারিতাম না । দৈবাৎ সে ছেলেট পীড়িত হইয়া মারা গেল। ছেলেট মারা গেলে আমার অত্যন্ত কষ্ট হইতে লালিল। তখনও আমি ঐ খুড়ীমার কাছেই থাকিতাম। তখন আমার বয়ঃক্রম সম্পূর্ণ বার বৎসর। এত দিবস আমার এই সকল অবস্থায় গত হইয়াছে। এই বার বৎসর কাল আমি আমোদ আহলাদে পরিবারের নিকটে মার কোলে নির্ভাবনায় সুখে ছিলাম। পরে ক্রমে ক্রমে আমার ভাবনা আসিয়া উপস্থিত হইতে লাগিল। ঐ বার বৎসরে আমার বিবাহ হয়। এ বিষয়ে আমি পূৰ্ব্বে কিছুই জানিতাম না। এক দিবস আমি খিড়কীর ঘাটে স্নান করিতে গিয়াছি সে সময়ে ঘাটে অনেক লোক আছে। ইতিমধ্যে আমাকে দেখিয়া একজন লোক বলিল এ মেয়েটকে যে পাইবে সে কৃতার্থ হইবে সে কতকাল কামনা করিয়াছে। আর একজন বলিল উহাকে লইবার জন্ত কত জন আসিতেছে দিলে এক্ষণেই লইয়া যায় উহার মা দেয় না। আর ∶ዓዓ«
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।