প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসস্থলদরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । Xፃፃጫ পরে ক্রমেই আমোদ বৃদ্ধি হইতে লাগিল। বিবাহের পূর্ব দিবস অলঙ্কার লাল সাড়ী বাজনা প্রভৃতি দেখিয়া আমার ভারী আহলাদ হইল। তখন আর আমার সে সকল মনে নাই। আমি হাসিয়া হাসিয়া সকল দেখিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। আমার আনন্দের আর সীমা থাকিল না। ঐ ব্যাপার সমাপন হইয়া গেলে পরদিবস প্রাতে সকল লোকে আমার মায়ের নিকট জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল ওরা কি আজি যাবে। তখন আমি ভাবিলাম ঐ যাহারা আসিয়াছে তাহারাই যাইবে। পরে আমাদের বাহির বাটীতে নানা প্রকার বাজনার ধুমধাম আরম্ভ হইল । তখন ভাবিলাম ঐ যাহারা আসিয়াছিল এখন বুঝি তাহারাই যাইতেছে। এই ভাবিয়া আমি অতিশয় আহলাদিত হইয়া মার সঙ্গে সঙ্গে বেড়াইতে লাগিলাম। অতি অল্প ক্ষণের মধ্যে ঐ সকল লোক বাটীর মধ্যে আসিয়া যুটিল। দেখিলাম কতক লোক আহলাদে পরিপূর্ণ হইয়াছে কতক লোক কান্দিতেছে। উহা দেখিয়া আমার প্রাণ চমকিয়া উঠিল। ক্রমে আমার দাদা খুড়া পিসী এবং মা প্রভৃতি সকলেই আমাকে কোলে লইয়া লইয়া কাদিতে লাগিলেন। ঐ সকলের কান্না দেখিয়া আমিও কাদিতে লাগিলাম। ঐ সময় আমি নিশ্চয় জানিলাম যে মা এখনি আমাকে দিবেন। তখন আমি আমার মার কোলে গিয়া মাকে আঁটিয়া ধরিয়া থাকিলাম। আর মাকে বলিলাম মা তুমি আমাকে দিও না। আমার ঐ কথা শুনিয়া ও এই প্রকার ব্যবহার দেখিয়া ঐ স্থানে সকল লোক কান্দিতে লাগিলেন এবং সকলে আমাকে সান্থনা করিতে লাগিলেন। আমার মা আমাকে কোলে লইয়া অনেক মতে সান্থনা করিয়া বলিলেন মা আমার লক্ষ্মী তুমিতে বেশ বুঝ ভয় কি আমাদের পরমেশ্বর আছেন কেঁদে না আবার এই কয়েক দিবস পরেই তোমাকে আনিব। সকলে শ্বশুর বাটীতে যায় কেহত তোমার মত কান্দে না তুমি কান্দিয়া ব্যাকুল হইলে কেন। স্থির হইয় কথা বল। তখন আমার এত ভয় হইয়াছে যে ভয়ে আমার শরীর থর থর করিয়া কঁাপিতেছে। আমার এমন হইয়াছে যে মুখে কথা বলিতে পারি না। তথাপি কান্দিতে কান্দিতে বলিলাম মা পরমেশ্বর কি আমার সঙ্গে যাবেন । মা বলিলেন স্থা যাবেন বৈ কি তিনি সঙ্গে যাবেন। তিনি তোমার সঙ্গে সঙ্গেই থাকিবেন । তুমি আর কান্দিও না। এই প্রকার বলিয়া অনেকে সাস্তুনা করিতে লাগিলেন। আমার ভয় এবং কান্না কিছুতে নিবৃত্তি হইল না। ক্রমেই আরো বৃদ্ধি হইতে লাগিল । ২২৩ বিবাহ । পিতৃগৃহ-ত্যাগে ।
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।