পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসস্থান্দরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । ∶ ዓbo> আমার বোধ হইতে লাগিল যেন তিনি আমারি মা। অথচ তিনি আমার মায়ের আকৃতি নহেন। আমার মা বড় সুন্দরী ছিলেন। আমার শাশুড়ী ঠাকুরাণী শু্যামবর্ণ এবং আমার মার সহিত অন্ত সাদৃশুও ছিল না। তথাপি তিনি কোলে লইলে আমি মা জ্ঞান করিয়া চক্ষু বুজিয়া থাকিতাম। আমার কান্না এবং ভয়ের কোন কারণ ছিল না। আমার বাপের বাটীতে সকলে আমাকে যে প্রকার স্নেহ ও যত্ন করিতেন এখানে তাহার অধিক স্নেহ ও যত্ব হইতে লাগিল। আমাকে এক তিলও মাটিতে নামান হইত না সকল দিবস আমাকে কোলেই রাখা হইত। তথাপি আমার এত ভয় ছিল দিব। রাত্রি ভয়ে আমার কলেবর কম্পিত হইত। সৰ্ব্বদা আমার চক্ষের জলে বুক ভাসিয়া যাইত। আর আমি মনে মনে অহরহ কেবল পরমেশ্বরকে ডাকিতাম । হে করুণাময় পিতা পরমেশ্বর জানিলাম তোমার অসীম করুণা। তখন যে আমি তোমাকে অহরহ ডাকিয়া মনে রাখিতাম সে কেবল আমার ভয়ের জন্ত মাত্র । তোমার নাম যে এত গুণবিশিষ্ট তাহা আমি জানিতাম না। আমার মা বলিয়াছিলেন ভয় হইলে পরমেশ্বরকে ডাকিও। আমি সেই জন্ত প্রাণপণে তোমাকে ডাকিতাম। যাহা হউক আমি যে তোমার মাহাত্ম্য ন জানিয়াই সৰ্ব্বদা একান্ত মনে তোমাকে ডাকিতাম সেও তোমারি কৃপামাত্র। যে তোমারে ডাকে নাথ পড়িয়া সঙ্কটে । জেনেছি তাহারে দয়া কর অকপটে ॥ প্রথমবার যাওয়াতেই আমার তিন মাস থাকা হয়। ঐ তিন মাস আমি মাতৃহীন সন্তানের দ্যায় দিবারাত্রি কান্নাতেই কালযাপন করিয়াছিলাম। পরে তিন মাস অতীত হইলে আমার খুড়া আসিয়া আমাকে লইয়া গেলেন। তখন আমি আমার মায়ের কোলে বসিয়া মা আমাকে পরকে দিয়েছিলে কেন বলিয়া কান্দিতে লাগিলাম। তাহ শুনিয়া সকল লোক হাসিতে লাগিল। আমার মা আমাকে সাস্তুনা করিয়া বলিলেন দেখ যাহার তোমার ছোট তাহারা তো তোমার মত কান্দে না। সকলেই শ্বশুর বাড়ী গিয়া থাকে। তোমার আর কত দিনে বুদ্ধি হইবে। কত দিনেই বা পরমেশ্বর সদয় হইয়া তোমাকে ভাল বুদ্ধি দিবেন। তুমি না জানি কতই বা কাদিয়াছিলে। মা আমাকে এই কথা বলিতেছেন এমন সময় আমার সকল আত্মীয় বন্ধু আসিয়া আমাকে ঘিরিল। তখন আমি আমার আত্মবন্ধুবান্ধবকে এবং খেলার সঙ্গিনী সকলকে দেখিয়া মহা আনন্দিত হইলাম আর ও সকল দুঃখের কথা কিছু মনে থাকিল না। সকল পুনরায় মাতৃক্রোড়ে।