প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসস্থনদরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । ১৭৮৩ হে পিতা দয়াময় তুমিতে নিকটেই আছ এবং মনেই আছ তবে কেন মনে নানা প্রকার বৈকল্য উপস্থিত হয় বুঝিতে পারি না। এই সকল কাষের গতিকে আমার দিবারাত্র বিশ্রাম ছিল না । আর অধিক কি বলিব আমার শরীরের যত্নমাত্রও ছিল না। অন্ত বিষয়ে যত্ন দূরে থাকুক দুবেলা আহার প্রায় ঘটিত না। কায়ের গতিকে কোন দিবস একবার আহারও ঘটিত না। এমনি কাযের ভিড় ছিল। যাহা হউক সে সকল কথায় প্রয়োজন নাই। বলিতেও লজ্জা বোধ হয় এবং বলাও বাহুল্য। তথাপি সংক্ষেপে দুই এক দিবসের কথা বলা আবশ্যক বটে। আমি ঐ ছেলেগুলি নিদ্রিত থাকিতে থাকিতে প্রভাতে উঠিয়া ঘরের সকল কায করিতাম। ঐ ছেলে কয়েকট না উঠিতে অন্ন পাক করিতাম। উহাদের খাওয়ান হইলে পরে অন্তান্ত কায মিটাইয়া বিগ্ৰহ সেবায় যাহা দিতে হয় তাহ সমুদায় দিয়া আমাদের ঘরের রান্নার সকল আয়োজন করিয়া পাক করিতাম । সে পাক ও নিতান্ত কম নহে। এক সন্ধ্যায় দশ বার সের চাউল পাক করিতে হইত। এ দিকে বাটীর কর্তাটার স্নান হইলেই ভাত চাই অন্ত কিছু আহার করিতে বড় ভালবাসিতেন না। এ কারণ অগ্ৰে তাহার জন্ত এক প্রস্থ পাক হইত। পরে অন্তান্ত সকল লোকজনের জন্ত পাক হইত। এই প্রকার পাক করাইতেই প্রায় বেলা তিন চারিট গত হইত। একদিন এই সকল খাওয়া দাওয়া মিটাইয়া আমি যখন ভাত লইয়া খাইতে বসিব ঐ সময়ে একজন লোক আসিয়া অতিথি হইল। সে লোকটা জাতিতে নমঃশূদ্র। সে পাক করিয়া থাইতে চাহিল না এবং অন্তান্ত সামগ্রী কিছু খাইতেও স্বীকার করিল না। সে বলিল চাট্ট ভাত পাইলে খাই। আমি যে তাহাকে পাক করিয়া দিব সে সময়ও নাই। আর কি করিব আমার ঐ যে মুখের ভাতগুলি ছিল সেই ভাতগুলি ঐ অতিথিকে ধরিয়া দিলাম। আমি ভাবিলাম রাত্রিতে পাক করিলে খাওয়া যাইবেক । পরে বৈকালে যে সকল কায করিতে হয় তাহা এক মত সারিয়া ছেলেদিগকে ঘুম পাড়াইয়া পাক করিতে চলিলাম। কিন্তু ঐ সময় আমার অত্যন্ত ক্ষুধা হইয়াছিল। আমি ঘরের মধ্যে এক আর অন্ত কোন লোক নাই। ঘরে খাবার দ্রব্য নানা । প্রকার আছে । তাহা আমি খেলেও খেতে পারি কে বারণ করে। বরং আমাকে থাইতে দেখিলে ঘরের লোকেরা সন্তুষ্ট হইবে। কিন্তু আমি ভাত ছাড়া অন্ত জিনিষ আপনি লইয়া কখন খাইতাম না । এই জন্ত আমার অনেক খাদ্য খাওয়ায় বাদ হইয়া গিয়াছিল। আর আমি বিবেচনা করিলাম আজ আমার খাওয়া হয় নাই শুনিলে সকলে গোল গৃহিণীপনার কষ্ট।
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।