>asb" দিদিমার মৃত্যু। বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় । একেবারে বিরাগ জন্মিল। যে চাচের উপর বসিয়া আছি তাহাই আমার পক্ষে ঠিক বোধ হইল, গালিচ দুলিচা সকল হেয় বোধ হইল। মনের মধ্যে এক অভূতপূৰ্ব্ব আনন্দ উপস্থিত হইল। আমার বয়স তখন আঠার বৎসর। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ । এতদিন আমি বিলাসের আমোদে ডুবিয়া ছিলাম। তত্ত্বজ্ঞানের কিছুমাত্র আলোচনা করি নাই। ধৰ্ম্ম কি ঈশ্বর কি কিছুই জানি নাই, কিছুই শিখি নাই। শ্মশানের সেই উদাস আনন্দ, তৎকালের সেই স্বাভাবিক সহজ আনন্দ মনে আর ধরে না । ভাষা সৰ্ব্বথা দুৰ্ব্বল, আমি সেই আনন্দ কিরূপে লোককে বুঝাইব ? তাহা স্বাভাবিক অনন্দ। তর্ক করিয়া যুক্তি করিয়া সেই আনন্দ কেহ পাইতে পারে না। সেই আনন্দ ঢালিবার জন্ত ঈশ্বর অবসর খোজেন। সময় বুঝিয়াই তিনি আমাকে এ আনন্দ দিয়াছিলেন। কে বলে ঈশ্বর নাই ? এই তার অস্তিত্বের প্রমাণ । আমিত প্রস্তুত ছিলাম না তবে কোথা হইতে এ আনন্দ পাইলাম ? এই ঔদাস্ত ও আনন্দ লইয়া রাত্রি দুই প্রহরের সময় আমি বাড়ীতে আসিলাম। সে রাত্রিতে আমার আর নিদ্রা হইল না। এ অনিদ্রার কারণ আনন্দ । সারা রাত্রি যেন একটা আনন্দ-জ্যোৎস্না আমার হৃদয়ে জাগিয়া রহিল। রাত্রি প্রভাত হইলে দিদিমাকে দেখিবার জন্ত আবার গঙ্গাতীরে যাই । তখন র্তাহার শ্বাস হইয়াছে। সকলে ধরাধরি করিয়া দিদিমাকে গঙ্গার গর্ভে নামাইয়াছে এবং উৎসাহের সহিত উচ্চৈঃস্বরে “গঙ্গানারায়ণ ব্ৰহ্ম” নাম ডাকিতেছে। দিদিমার মৃত্যু হইল। আমি নিকটস্থ হইয়া দেখিলাম তাহার হস্ত বক্ষঃস্থলে এবং অনামিকা অঙ্গুলিটা উৰ্দ্ধমুখে রহিয়াছে। তিনি “হরিবোল” বলিয়া অঙ্গুলি ঘুরাইতে ঘুরাইতে পরলোক চলিয়া গেলেন। তাহ দেখিয়া আমার বোধ হইল, মরিবার সময় উদ্ধে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া আমাকে দেখাইয়া গেলেন, “ঐ ঈশ্বর ও পরকাল”। দিদিমা যেমন আমার ইহকালের বন্ধু ছিলেন তেমনি পরকালেরও বন্ধু। মহা সমারোহে তাহার শ্রাদ্ধ হইল। আমরা তৈল হরিদ্র মাখিয়া শ্রাদ্ধের যুপকাষ্ঠ গঙ্গাতীরে পতিয়া আসিলাম। এই কয়দিন খুব গোলযোগে কাটিয়া গেল। পরে দিদিমার মৃত্যুর পূর্বদিন রাত্রে যেরূপ আনন্দ পাইয়াছিলাম তাহ পাইবার জন্ত আমার চেষ্ট হইল। কিন্তু তাহা আর পাইলাম না। এই সময়ে আমার মনে কেবলই ঔদাস্ত আর বিষাদ । সেই রাত্রিতে ঔদাস্তের সহিত আনন্দ পাইয়াছিলাম, এখন
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।