পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ه سوالا বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় । পড়িল। স্বষ্টির কৌশল চিন্তায় স্রষ্টার জ্ঞানের পরিচয় পাই। নক্ষত্রখচিত আকাশ দেখিয়া বুঝি তিনি অনন্ত, এই স্বত্রটুকু ধরিয়া তাহার স্বরূপ মনের মধ্যে আরও খুলিয়া গেল। দেখিলাম, যিনি অনন্ত-জ্ঞান, তাহার ইচ্ছাকে কেহ বাধা দিতে পারে না। তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তাহাই হয়। আমরা, সকল উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়া রচনা করি, তিনি তাহার ইচ্ছায় সকল উপকরণ স্বষ্টি করিয়া রচনা করেন। তিনি জগতের কেবল রচনা-কর্তা নহেন, তাহা হইতে উচ্চ, তিনি ইহার স্বষ্টি-কৰ্ত্তা। এই স্বল্প বস্তু সকল অনিত্য, বিকারী, পরিবর্তনশীল ও পরতন্ত্র। ইহাদিগকে যে পূর্ণজ্ঞান স্বষ্টি করিয়াছেন ও চালাইতেছেন তিনিই নিত্য, অবিকৃত, অপরিবর্তনীয় ও স্বতন্ত্র। সেই নিত্য সত্য পূর্ণ পুরুষ সকল মঙ্গলের হেতু এবং সকলের সম্ভজনীয়। কতদিন ধরিয়া এইটা আমার বুদ্ধির আলোচনায় স্থির করিলাম ; কত সাধনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম। তথাপি আমার হৃদয় কাপিতে লাগিল। জ্ঞানপথ অতি দুর্গম পথ, এ পথে সাহস দেয় কে ? আমি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম তাহাতে সায় দেয় কে ? কিরূপ সায় ? যেমন পদ্মায় মাঝির নিকট হইতে আমি একটা সায় পাইয়াছিলাম, সেইরূপ সায়। - আমি একবার জমিদারী কালীগ্রামে যাই । অনেক দিনের পর বাড়ীতে ফিরি। আমি পদ্মার উপর বোটে । তখন বর্ষাকাল আকাশে ঘোর ঘনঘটা, বেগে বায়ু উঠয়াছে। পদ্মা তোলপাড় হইতেছে, মাঝির ভারি তুফান দেখিয়া আর অগ্রসর হইতে পারিল না, কিনারায় বোট বাধিয়া ফেলিল। সেই কিনারাতেও বোট স্থির থাকিতে পারিতেছে না। কিন্তু বহুদিন বিদেশে, শীঘ্র বাড়ীতে আসিতে বড় ইচ্ছা। বেলা চারিটার সময়ে একটু বাতাস কমিলে আমি মাঝিকে বলিলাম যে, এখন নৌকা ছাড়িতে পারিবি ? সে বলিল, হুজুরের হুকুম হয় তো পারি। আমি মাঝিকে বলিলাম, তবে ছাড়। তার পর দেখি সময় চলিয়া যায় তবু নৌকা ছাড়ে না। আধ ঘণ্টা হইয়া গেল তবু ছাড়ে না। মাঝিকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, তুই যে বল্লি, হুজুরের হুকুম হইলে নৌকা ছাড়িয়া দিতে পারি, আমি তো হুকুম দিয়াছি তবে এখনও ছাড়িলি না কেন ? এখন একটু ঝড় থেমেছে, আবার কখন ঝড় উঠবে তাহার ঠিক নাই। যদি ছাড়িতে হয় তো এখনি ছাড়। সে বলিল যে, বৃদ্ধ দেওয়ানজী বলিলেন,—“ওরে মাঝি, এমন কৰ্ম্ম কি করিতে হয় ? একে এই সরদার মোহানা, কুল-কিনারা কিছুই দেখা যায় না, তাহাতে শ্রাবণের সংক্রান্তি। ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা কিনারাতেই থাকিতে পারিতেছে না। তুই কিনা এই অবেলায় এহেন পদ্মায় পাড়ি