প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মহৰ্ষির জীবনী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ। ১৮০৫ দিতে চাস ?” দেওয়ানজীর এই কথায় ভয় পেয়ে আমি নৌকা ছাড়িতে পারি নাই। আমি বলিলাম ছাড়। সে অমনি নৌকা খুলে পাইল তুলে দিলে। অমনি বাতাসের এক ধাক্কায় নৌকা পদ্মার মধ্যে চলিয়া গেল । হাজার নৌকা কিনারায় বাধা ছিল তাহারা সকলে একস্বরে বলিয়া উঠিল, এখন যাবেন না যাবেন না। তখন আমার হৃদয় ডুবিয়া গেল। কি করি আর ফিরিবার উপায় নাই—নৌকা পাইল পাইয়া শ শ করিয়া চলিতে লাগিল। খানিক গিয়া দেখি যে তরঙ্গে তরঙ্গে জল ফাপিয়া সম্মুখে যেন একটা দেওয়াল উঠিয়াছে। নৌকা তাহাকে ভেদ করিতে ছুটিল, আমার প্রাণ উড়িয়া গেল। এমন সময় অদূরে দেখি, একখানা ডিঙ্গি হাবুডুবু খাইতে খাইতে মোচার খোলার মত ওপার হইতে আসিতেছে। তাহার মাঝি আমাদের সাহস দেখিয়া সাহস দিয়া চেচাইল্প বলিয়া উঠিল—“ভয় নাই, চলে যান” । আমার উৎসাহে উৎসাহের স্বর মিশাইয় এমন ভরসা দেয় কে ? আমি এইরূপ সায় চাই। কিন্তু হা! তা আর কে দিবে ? পঞ্চম পরিচ্ছেদ । ৰখনই আমি বুঝিলাম যে ঈশ্বরের শরীর নাই, তাহার প্রতিমা নাই, তখন হইতে আমার পৌত্তলিকতার উপর ভারি বিদ্বেষ জন্মিল। রামমোহন রায়কে স্মরণ হইল,—আমার চেতন হইল, আমি তাহার অনুগামী হইবার জন্ত প্রাণ ও মন সমর্পণ করিলাম। শৈশব কাল অবধি আমার রামমোহন রায়ের সহিত সংস্রব । আমি তাহার স্কুলে পড়িতাম। তখন আরও ভাল স্কুল ছিল, হিন্দু কলেজ ছিল। কিন্তু আমার পিতা রামমোহন রায়ের অনুরোধে আমাকে ঐ স্কুলে দেন। স্কুলট হেদুয়ার পুষ্করিণীর ধারে প্রতিষ্ঠিত। আমি প্রায় প্রতি শনিবার দুইটার সময় ছট হইলে রমাপ্রসাদ রায়ের সহিত রামমোহন বায়ের মাণিকতলার বাগানে যাইতাম । অন্ত দিনও দেখা করিয়া আসিতাম। কোন কোন দিন আমি তথায় গিয়া বড়ই উপদ্রব করিতাম। বাগানের গাছের নিছু ছিড়িয়া, কখন কড়াই গুটী ভাঙ্গিয় মনের মুখে খাইতাম । রামমোহন রায় একদিন কহিলেন, ব্রাদার, রৌদ্রে হুটাপাট করিয়া কেন বেড়াও, এইখানে বোসো। যত নিছু খেতে পার এখানে বসিয়া খাও। মালীকে বলিলেন, যা, গাছ থেকে নিছু পেড়ে নিয়ে আয়। সে তৎক্ষণাৎ এক থাল ভরিয়া নিচু আনিয়া দিল। তখন রামমোহন রায় বলিলেন, যত ইচ্ছা নিছু খাও। তাহার মুৰ্ত্তি প্রশান্ত ও গম্ভীর। আমি বড় শদ্ধ ও ভক্তির সহিত র্তাহাকে দেখিতাম । বাগানে একটা কে সাহস দিবে ? রামমোহন রায় ।
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।