প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—অক্ষয়কুমার দত্ত—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ। ১৮১৭ হইতে পারে, কিন্তু তাহ অধিককাল স্থায়ী হয় না। পরম সুন্দরী ভাৰ্য্যার কুসুম-সদৃশ মনোহর লাবণ্যও অবিলম্বে অতি মলিন বোধ হয় এবং পূৰ্ব্বে যে অপ্রণয়-রূপ অগ্নি-কণা মোহরূপ নিবিড় আবরণে আচ্ছন্ন ছিল তাহীও ক্রমে ক্রমে প্রজলিত হইতে থাকে। যদি স্বামী অতিশয় মিথ্যাবাদী প্রতারক বিশ্বাসঘাতক হয় আর স্ত্রী যদি সদাচারিণী সত্যবাদিনী ও অতিশয় ধৰ্ম্মভীত হন, তবে নিজ পতিকে পুনঃ পুনঃ অধৰ্ম্মাচরণে প্রবৃত্ত হইতে দেখিয়া তিনি সৰ্ব্বদাই ক্লেশানুভব ও গ্লানি প্রকাশ করেন। যে স্থলে স্বামী যদৃচ্ছ লাভে সন্তুষ্ট থাকিয় কোন ক্রমে সংসার-যাত্রা নিৰ্ব্বাহ করিতে পারিলেই আপনাকে মুখী ও চরিতার্থবোধ করেন আর র্তাহার চিরসহচরী ভোগাভিলাষিণী পত্নী পরম শোভাকর বেশ ভূষা ও বৈষয়িক আড়ম্বর প্রকাশার্থেই সতত ব্যাকুলা থাকে, সে স্থলে যেরূপ অমুখের সম্ভাবনা তাহা অনেকানেক স্বামীই প্রত্যক্ষ অনুভব করিয়া থাকেন। ফলতঃ বিদ্যাবান উদারস্বভাব মহাশয় পুরুষের সহিত কোন বিদ্যাহীন কলহপ্রিয়া ক্ষুদ্রাশয় রমণীর পাণিগ্রহণ হওয়া অশেষ ক্লেশের বিষয় । ইহার উদাহরণ সংগ্ৰহার্থে আর অধিক দর্শনের প্রয়োজন নাই; এদেশের অনেক বিদ্যার্থী ব্যক্তিই এবিষয়ের বিশিষ্টরূপ দৃষ্টান্ত-স্থল। বিদ্যাবান পতি মানব-জন্মের সার্থক্য-সাধক জ্ঞান-রসের রসিক হইয়া তদ্বিষয়ের প্রসঙ্গেই পরম পরিতোষ প্রাপ্ত হন, ইহাতে মুর্থ স্ত্রীর সহবাসে কোন ক্রমেই তাহার মনস্তুষ্টি জন্মে না এবং স্ত্রীও পতির ভিন্নমতি দেখিয়া কখনই সন্তোষ প্রকাশ করেন না। স্বামী যে সকল বিষয় অলীক ও অপকারী বলিয়া জানেন, তাহার কুসংস্কারাবিষ্ট পত্নী তাহাই অবশু কৰ্ত্তব্যরূপে অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন। ধৰ্ম্ম বিষয়ে উভয়ের অতিশয় অনৈক্য বশতঃ একের অতি শ্রদ্ধেয় পরম পুজনীয় পদার্থও অন্তের উপেক্ষা ও অনাদরের আস্পদ হইয়া উঠে। এক্ষণে এতদেশীয় বিদ্যাবান যুবকমণ্ডলীর মধ্যে এইরূপ শত শত ঘটনা ঘটতেছে এবং তাহ অনেকেরই মনস্তাপ ও দুষ্প্রবৃত্তিরও কারণ হইয়াছে। এইরূপে সৰ্ব্ব বিষয়ে একীভূত হওয়া যাহারদের পণ, কোন বিষয়েই তাহারদের ঐক্য থাকে না,—তাহারদের অন্তঃকরণ পরস্পর যত অন্তর ভূতল ও অন্তরীক্ষ তত অন্তর নহে। কোন অপরিচিত ব্যক্তির কোন অজ্ঞাতকুলশীল মনুষ্যের—কোন বিদেশীয় লোকেরও সহিত যে সকল বিষয়ে কথোপকথন করা যায়, যাহার অৰ্দ্ধাঙ্গ-স্বরূপ একাত্ম-স্বরূপ হওয়া উচিত, তাহার নিকটে সে সকল কথার প্রসঙ্গও করিবার সম্ভাবনা নাই ; কি আক্ষেপের বিষয়! যৎসামান্ত সাংসারিক কথা এবং কোন ইতর মুখের প্রসঙ্গ ব্যতিরেকে তৎসন্নিধানে আর কোন বিষয়ই উত্থাপন করিবার
- Rゲ