পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> つの বঙ্গ-গৌরব সে বৎসর প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্ৰস্তুত হইতে আদেশ দেন। প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় তিনি সম্মানের সহিত পাশ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনিই প্ৰথম ইংরেজি সাহিত্যের এম. এ । আইন পরীক্ষার পর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইনের কঠিন অনার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও তাহার চারি বৎসর পরে “ঠাকুর ল’ লেকচারার নিযুক্ত হন। এই উপলক্ষ্যে র্তাহার বক্তৃতাদি পরে ব্রিটিশ ভারতে বন্ধকী আইন”২ নামে প্ৰসিদ্ধ হইয়া প্রকাশিত হয়। ইহাতে যে কয়েক সহস্র মুদ্রা প্ৰাপ্ত হন তাহার সমস্তই তিনি কয়েক বৎসর সরস্বতী পূজায় ব্যয় করেন। স্যার রাসবিহারী ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ডি. এল. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ব্যারিস্টারি পড়িবার জন্য যাইবার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাহা হইয়া উঠে নাই। পরে তিনি ইউরোপ ভ্ৰমণে বহির্গত হন। ব্যারিস্টার না হইলেও আইন ব্যবসায়ে তিনি যে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রকাশ করিয়া প্রভূত অর্থে পার্জন করেন তাহা বহু ব্যারিস্টার আজীবন পরিশ্রম করিয়াও করিতে পারেন নাই। তিনি বড়লাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্যরূপে ‘বাঁটোয়ারা আইন” ও “জাজমেন্ট ডেটার্স আইন” প্রণয়ন করিয়া ভারতের মহৎ উপকার সাধিত করেন। লবণশুষ্ক রহিত, দুৰ্ভিক্ষ নিবারণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার বিস্তার এবং অন্যান্য নানাবিধ বিল উপলক্ষে তিনি যে তীব্র আন্দোলন চালাইয়াছিলেন, তাহাতে অনেক সময়ে তাহাকে অনেকের অপ্রিয়ভাজন হইতে হয়। কর্তব্য হিসাবে তাহাতে তিনি ভ্ৰক্ষেপও করিতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন উপলক্ষে লর্ড কার্জনের এশিয়াবাসীকে আক্রমণ সম্পর্কে তঁহার সুস্পষ্ট উত্তরে তঁহার তেজস্বিতার অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের রাজনীতি-ক্ষেত্রে তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। স্যার গোপালকৃষ্ণ গোখেল মহাশয়ের অনুরোধে সুরাটে জাতীয় কংগ্রেসের অধিনায়কত্ব করিতে তিনি স্বীকৃত হন, কিন্তু অন্য এক দল তিলক মহাশয়কে সভাপতি করিবার চেষ্টায় বিফল হওয়ায় এক গোলমালের সৃষ্টি হয় এবং তাঁহাতে সেবারকার অধিবেশন পণ্ড হয়। পর বৎসর মাদ্রাজে কংগ্রেসের অধিবেশনে মাদ্রাজবাসিগণেব অনুরোধে স্যার রাসবিহারী তাহাতে সভাপতিত্ব করেন। আইনজ্ঞানও ছিল তদ্রুপ। শুধু ভারতীয় আইন নহে, জগতের নানা দেশের আইন সম্বন্ধে তাহার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল। প্রকৃতপক্ষে তিনি শুধু আইনজ্ঞই ছিলেন না, আইন প্ৰণয়নকারী হিসাবেও তিনি যশস্বী হইয়াছিলেন। স্যার রাসবিহারী এম. এ. ডি. এল ইত্যাদি ছাড়াও বহু উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে সি-আই-ই, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সি. এস.আই. এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে নাইট উপাধি লাভ করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোকে প্ৰস্থান করেন। রাসবিহারী যেমন প্রভূত অর্থার্জন করিয়াছিলেন তেমনি দানেও তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন। তঁহার অগাধ দান বর্ণনায় আবদ্ধ করা যায় না। সে দান তাহার অন্তরের গভীরতায় নিহিত ছিল। আজীবন অকাতরে তিনি এত অধিক দান করিয়া গিয়ুছেন যাহার কোন ইয়াত্তা নাই। তঁহার দান গ্রহীতা ভিন্ন অপর কেহ জানিতে পারিত না। তিনি নিজেও দান করা ছাড়া পরে তাহার কোনো হিসাব রাখিবার আবশ্যক বোধ করেন নাই।