পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশানচন্দ্ৰ ঘোষ S 8s তিনি হেয়ার স্কুলের হেডমাস্টার" ছিলেন। এই তেরো বৎসরে বাংলার কত লোক যে র্তাহার নিকট শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াছেন এবং তাঁহার উচ্চ আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়াছেন তাহার ইয়ত্ত নাই। পঠদ্দশায় তাহাকে যে কঠোর দারিদ্র্যের সহিত সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল, তাহা তিনি জীবনে কোনো দিন বিস্মৃত হন নাই; সেজন্য তিনি প্রভূত অর্থের মালিক বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ‘কথামালা’ পুস্তকের অনুকরণে তিনি যে “হিতোপদেশ” নামক স্কুলপাঠ্য পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন, তাহা তঁহার প্রচুর আয়ের পথস্বরূপ হইয়াছিল। তিনি বাংলা ভাষায় “ভারতবর্ষের ইতিহাস’ষ্ট প্রকাশ করেন এবং তাহ ৫০ বৎসরেরও অধিককাল বাংলার প্রায় সকল বিদ্যালয়ে পঠিত হইয়াছিল। গভর্নমেন্টের চাকরি করার সময় তিনি কিছুদিন হুগলির ভার্নাকুলার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের হেডমাস্টার হইয়াছিলেন। এবং একবার তাহাকে বাংলার শিক্ষাবিভাগের সহকারী ডিরেক্টর করা হইয়াছিল। তঁহার পূর্বে আর কোনো বাঙালি ঐ পদে নিযুক্ত হইবার সৌভাগ্য লাভ করেন নাই। শিক্ষকতা কার্যে ব্ৰতী থাকিবার সময় এবং অবসর গ্রহণের পর তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ায় অতিবাহিত করিতেন। সংস্কৃত সাহিত্যে র্তাহার অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল এবং সেজন্য তঁহার পালি ভাষার প্রতিও অনুরাগ জন্মিয়ছিল। তিনি জীবনের দীর্ঘ ষোলো বৎসর কাল পালি ভাষার অনুশীলনে অতিবাহিত করিয়াছিলেন। তিনি ‘পালি জাতক’” নামক গ্ৰন্থসমূহের যে অনুবাদ ছয় খণ্ডে প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন, তাহা চিরদিন তঁহাকে সাহিত্যজগতে অমর করিয়া রাখিবে। ঐ ছয় খণ্ড জাতক-গ্ৰন্থ প্রকাশের জন্য তিনি ১৬ হাজার টাকা ব্যয় করিয়া গিয়াছেন। সুদীর্ঘকাল কলিকাতায় বাস করায় এবং বহু ধনী ছাত্রের সম্পর্কে আসায় ব্যবসায়বাণিজ্যের প্রতি র্তাহার বিশেষ বোক হইয়াছিল। অবসর গ্রহণের পর তিনি নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের সহিত সংশ্লিষ্ট হইয়াছিলেন এবং বহু লিমিটেড কোম্পানির ডিরেক্টর নিযুক্ত লোক যে কত কাজ করিতে পারে, তাহা স্বৰ্গত ঈশানচন্দ্ৰ দেখাইয়া গিয়াছেন। পাঠ্যপুস্তক রচনায় তাহার বিশেষ আগ্রহ থাকায় সে কার্য হইতে তিনি কোনোদিন বিরত হন নাই। তাহার পর রীতিমতভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যে র্তাহাকে প্রায় সর্বদা ব্যাপৃত থাকিতে হইত। এই কার্যের অবসরে তঁহাকে পালি জাতকের অনুবাদ কাৰ্য করিতে হইত। নানা কার্যে র্তাহার গৃহে সর্বদা দৰ্শন-প্রার্থীর সমাগম হইলেও কোনো লোককে তিনি কোনো দিন দর্শনদানে বিমুখ ছিলেন না, সকলকেই যথাসাধ্য সাহায্য করিবার চেষ্টা করিতেন। নিজে নানাপ্রকার দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়া পালিত হইয়াছিলেন বলিয়া পরের দুঃখ বুঝিবার শক্তি তাহার ছিল এবং তাহা সর্বদা তাহার কার্যে প্রকাশ পাইত। ঈশানচন্দ্ৰ অতি দরিদ্র অবস্থা হইতে প্ৰভূত অর্থের অধিকারী হইয়াছিলেন বলিয়া