পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী বিবেকানন্দ Vò এই সময়ে বোস্টন শহরে অপ্রত্যাশিত ভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিক ভাষার অধ্যাপক মিঃ জে. এইচ. রাইট সাহেবের সহিত তাহার পরিচয় হইয়া গেল। তিনি বিবেকানন্দের অসাধারণ পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হইয়া চিকাগো শহরের মিঃ বনির নিকট র্তাহার প্রতিভার প্রশংসা করিয়া একখানা পত্র লিখিয়া দিলেন। যাহারা ধৰ্মসভায় বক্তৃতা করিবেন, মিঃ বনি তঁহাদের নির্বাচন করিবার কর্তা। সুতরাং এদিক দিয়া আর কোন চিন্তা রহিল। না। কিন্তু বিপদ অন্য পথে উপস্থিত হইল। মিঃ রাইট স্বামীজির হাতে মিঃ বনির ঠিকানা লেখা যে কাগজখানি দিয়াছিলেন, তাহা তিনি হারাইয়া ফেলিলেন। চিকাগো সহরে আসিয়া তাই তিনি মিঃ বনির গৃহ সহসা খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিলেন না। পথের লোককে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিলে তাহারা তাহার পরিচ্ছদ দেখিয়া পথ ত দেখাইয়া দিলেই না-বরং উপহাস ও নানা রকম অত্যাচার করিতে লাগিল। সে রাত্রি তাহার স্টেশনে একটি খালি প্যাকিং-বাক্সের ভিতরেই দারুণ শীতে কাটিয়া গেল। পরের দিন আবার মিঃ বনির বাড়ি অনুসন্ধান আরম্ভ হইল। আবার সেই অত্যাচার, উপহাস। অবশেষে তিনি শ্রাস্ত ক্লান্ত হইয়া একটি অট্টালিকার সম্মুখে বসিয়া পড়িলেন। তিনি বসিয়া চিন্তা করিতেছেন, এমন সময় অট্টালিকার ভিতর হইতে একটি রমণী বাহির হইয়া আসিয়া তঁহকে ওরূপ ভাবে বসিয়া থাকিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। স্বামীজি তাহাকে সমস্ত কথা জানাইলে তিনি নিজে সঙ্গে করিয়া তীহাকে মিঃ বনির বাড়িতে রাখিয়া আসিলেন। এইরূপে ভগবানের অনুগ্রহে স্বামীজির সমস্ত ভাবনার অবসান হইল। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মহাসভার প্রথম দিনের অধিবেশন আরম্ভ হয়। স্বামীজি সকলের শেষে বক্তৃতা দিতে উঠিয়াই প্ৰথমে বলিলেন—“আমার আমেরিকাবাসী ভ্ৰাতা ও ভগিনীগণ!” তঁহার এই একটি সম্বোধনেই সভার সবগুলি হৃদয় জয় করা হইয়া গেল। বিশ্ব-ভ্ৰাতৃত্বের এই অপূর্ব আহ্বান শুনিয়া সহস্ৰ লোক করতালি দিয়া তাঁহাকে অভিনন্দিত করিল। তারপর তিনি ১৫, ১৯, ২০, ২৬ এবং ২৭ তারিখে সভায় বক্তৃতা করেন। প্রত্যেক বিবেকানন্দের অদ্ভুত বাগ্নিতার জন্য তাহার নাম দিয়াছিল—“সাইক্লোনিক হিন্দু!” নিউইয়র্কের কোন সুপ্ৰসিদ্ধ সাময়িকপত্রের সম্পাদক লিখিয়াছিলেন, “হিন্দুর ন্যায় পণ্ডিত জাতির ভিতর খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক পাঠানো যে অত্যন্ত বোকামির কাজ, বিবেকানন্দের বক্তৃতা শুনিবার পর তাহা বেশ বুঝিতেছি।” আমেরিকার বহু নরনারী বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন; ইহাদের ভিতর একজনের নাম আমরা সকলেই জানি। ইনি কুমারী মাৰ্গারেট নোেবল অথবা ভগিনী নিবেদিতা”। গুরুর পদাঙ্কানুসরণ করিয়া ইনি স্বদেশ ছাড়িয়া আসিতেও দ্বিধা করেন নাই। আমেরিকা হইতে বিবেকানন্দ ইংল্যান্ডে গমন করিয়াছিলেন। সেখানেও তিনি অসাধারণ সম্মানের সহিত অভিনন্দিত হইয়াছিলেন। সুপ্ৰসিদ্ধ পণ্ডিত মোক্ষামূলার তাহার সহিত আলাপ করিয়াই রামকৃষ্ণের জীবনী রচনা করিয়া গিয়াছেন। বিবেকানন্দের এই সময়কার