কিন্তু যেদিন হইতে মাধবী তাহার ভাদ্রমাসের ভরা গঙ্গার মত রূপ, স্নেহ, মমতা লইয়া পিতৃ-ভবনে ফিরিয়া আসিল, সেইদিন হইতে যেন সমস্ত সংসারে নবীন বসন্ত ফিরিয়া আসিয়াছে। এখন সবাই কহে, বড়দিদি, সবাই বলে মাধবী। বাড়ির পোষা কুকুরটা পর্য্যন্ত দিনান্তে একবার বড়দিদিকে দেখিতে চাহে! এত লোকের মধ্যে সেও যেন একজনকে স্নেহময়ী সর্ব্বময়ী বলিয়া বাছিয়া রাখিয়াছে। বাড়ির প্রভু হইতে সরকার, গোমস্তা, দাস, দাসী সবাই ভাবে, বড়দিদির কথা, সবাই তাহার উপর নির্ভর করে; সকলেরই মনে মনে একটা ধারণা যে, যে কারণেই হউক, এই বড়দিদিটির উপর তাহার একটু বিশেষ দাবী আছে।
স্বর্গের কল্পতরু কখনও দেখি নাই, দেখিব কি না তাহাও জানি না, সুতরাং তাহার কথা বলিতেও পারিলাম না! কিন্তু, এই ব্রজবাবুর সংসারবর্ত্তী লোকগুলা একটি কল্পতরু পাইয়াছিল। তলায় গিয়া হাত পাতিত, আর হাসিমুখে ফিরিয়া আসিত।
এরূপ পরিবারের মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ একটা নূতন ধরনের জীবন অতিবাহিত করিবার উপায় দেখিতে পাইল। সকলে যখন একজনেরই উপর সমস্ত ভার রাখিয়াছে, তখন সেও তাহাদের মতই করিতে লাগিল। কিন্তু অপরের অপেক্ষা তাহার ধারণা একটু ভিন্ন প্রকারের। সে ভাবিত, বড়দিদি বলিয়া একটি জীবন্ত পদার্থ বাটীর মধ্যে থাকে, সকলকে দেখে, সব আবদার সহ্য করে, যাহার যাহা প্রয়োজন, তাহা তাহারই নিকট পাওয়া যায়। কলিকাতায় রাজপথে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নিজের জন্য নিজে ভাবিবার প্রয়োজনটা সে কতক বুঝিয়াছিল, কিন্তু এখানে আসিয়া অবধি সে একেবারে