পাতা:বড়দিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৯
বড়দিদি


পারে যে, চাকরির জন্য মাষ্টারবাবুর একতিল উদ্যোগ নাই, ইচ্ছাও নাই! যাহা আপাততঃ পাইয়াছে, তাহাতেই সে পরম সন্তুষ্ট।

 বেলা দশটা বাজিলেই বড়দিদির নিকট হইতে স্নানাহারের তাগিদ আসে। ভাল করিয়া আহার না করিলে বড়দিদির হইয়া প্রমীলা অনুযোগ করিয়া যায়। অধিক রাত্রি পর্য্যন্ত বই লইয়া বসিয়া থাকিলে ভৃত্যেরা গ্যাসের চাবি বন্ধ করিয়া দেয়, বারণ করিলে শুনে না— বলে, “বড়দিদির হুকুম।”

 একদিন মাধবী পিতার কাছে হাসিয়া বলিল, “বাবা, প্রমীলা যেমন, তার মাষ্টারও ঠিক তেমনি।”

 “কেন মা?”

 দু’জনেই ছেলে-মানুষ। প্রমীলা যেমন বোঝে না, তার কখন্‌ কি দরকার, কখন্‌ কি খাইতে হয়, কখন্‌ শুইতে হয়, কখন্‌ কি করা উচিত, তার মাষ্টারও সেই রকম, নিজের কিছুই বোঝে না— অথচ অসময়ে এমনি জিনিষ চাহিয়া বসে যে, জ্ঞান হইলে, তাহা আর কেহ চায় না।”

 ব্রজবাবু বুঝিতে পারিলেন না, মুখপানে চাহিয়া রহিলেন।

 মাধবী হাসিয়া বলিল, “তোমার মেয়েটি বোঝে কখন্‌ তার কি দরকার?”

 “তা’ বোঝে না?”

 “অথচ, অসময়ে উৎপাত করে ত?”

 “তা করে।”

 “মাষ্টারবাবু তাই করে—”

 ব্রজবাবু হাসিয়া বলিলেন, “ছেলেটি বোধ হয়, একটু পাগল।”