মাধবী ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “তুই দূর হ— একটা মানুষ একটি পয়সা হাতে না নিয়ে চলে গেল, আর তুই বলিস্ খোঁজাখুঁজি কেন?”
“তার কাছে একটিও পয়সা নেই, তা কি ক’রে জান্লে?”
“তা আমি জানি, কিন্তু তোর অত কথায় কাজ কি?”
বিন্দু চুপ করিয়া গেল। ক্রমে যখন সাত দিন কাটিয়া গেল, অথচ কেহ ফিরিয়া আসিল না, তখন মাধবী একরূপ অন্ন জল ত্যাগ করিল। তাহার মনে হইত, সুরেন্দ্রনাথ অনাহারে আছে। যে বাড়ির জিনিষ চাহিয়া খাইতে পারে না, পরের কাছে কি সে চাহিতে পারে? তাহার দৃঢ় ধারণা, সুরেন্দ্রনাথের কিনিয়া খাইবার পয়সা নাই, ভিক্ষা করিবার সামর্থ্য নাই, ছোট ছেলের মত অসহায় অবস্থায় হয় ত বা কোন ফুটপাতে বসিয়া কাঁদিতেছে, না হয় কোন গাছের তলায় বই মাথায় দিয়া ঘুমাইয়া আছে।
ব্রজরাজবাবু ফিরিয়া আসিয়া সব কথা শুনিয়া মাধবীকে কহিলেন, “কাজটা ভাল হয়নি মা।” মাধবী কষ্টে অশ্রু সংবরণ করিল।
এদিকে সুরেন্দ্রনাথ পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইত। তিনদিন অনাহারে কাটিল; কলের জলে পয়সা লাগে না, তাই ক্ষুধা পাইলে, পেট ভরিয়া জল খাইত।
একদিন রাত্রে অবসন্ন-শরীরে সে কালীঘাটে যাইতেছিল, কোথায় নাকি শুনিয়াছিল, সেখানে খাইতে পাওয়া যায়। অন্ধকার রাত্রি, তাহাতে আবার মেঘ করিয়াছিল, চৌরঙ্গীর মোড়ে একখানা গাড়ী তাহার উপর আসিয়া পড়িল। গাড়োয়ান কোনরূপে অশ্বের বেগ সংবরণ করিতে পারিয়াছিল। সুরেন্দ্র প্রাণে মরিল না বটে,