মাধবী কথাটা অনেকক্ষণ বুঝিয়াছিল, তাই অল্পে অল্পে মুখখানি বিবর্ণ হইতেছিল; তথাপি আত্মসংবরণ করিয়া কহিল, “ওঃ— তাঁর কথা? তিনি আপনি চলে গেছেন।”
“অমন রাঙা পা-দুটি তার পছন্দ হ’ল না?”
মাধবী মুখ ফিরাইল— কথা কহিল না। মনোরমা হাত দিয়া আদর করিয়া তাহার মুখ ফিরাইল— কৌতুক করিতে গিয়া দেখিল, তাহার দুই চক্ষে একরাশি জল আনিয়া দিয়াছে। আশ্চর্য্য হইয়া কহিল, “একি মাধবী!”
মাধবী আর সামলাইতে পারিল না— চক্ষে অঞ্চল দিয়া কাঁদিয়া ফেলিল।
মনোরমার বিস্ময়ের সীমা নাই— একটা উপযুক্ত কথাও সে খুঁজিয়া পাইল না। কিছুক্ষণ কাঁদিতে দিল! তাহার পর জোর করিয়া মুখ হইতে অঞ্চল খুলিয়া লইয়া নিতান্ত দুঃখিতভাবে বলিল, “একটা সামান্য কৌতুক সইতে পারলে না বোন্!”
মাধবী চক্ষু মুছিতে মুছিতে বলিল, “আমি যে বিধবা দিদি!” তাহার পর দুই জনেই চুপ করিয়া রহিল। দুই জনেই নীরবে কাঁদিতে লাগিল। মনোরমা কাঁদিতেছিল— মাধবীর দুঃখে। সে বিধবা তাই বলিয়া— কিন্তু মাধবীর অন্য কারণ ছিল। এখনি না জানিয়া মনোরমা যে ঠাট্টা করিয়াছে, “সে তোকে বৈ আর জান্ত না”— মাধবী তাহাই ভাবিতেছিল। একথা যে নিতান্ত সত্য, সে তাহা জানিত। অনেকক্ষণ পরে মনোরমা বলিল, “কাজটা কিন্তু ভাল হয়নি!”
“কোন্ কাজটা?”