না; তাঁহার শাসন-গুণে প্রজারা সে ব্যয় বহন করে। মথুরবাবুর নিকট একটি পয়সা বাকি-বকেয়া থাকিবার জো নাই। ঘর জ্বালাইতে, ভিটা-ছাড়া করিতে, কাছারি-ঘরের ক্ষুদ্র কুঠুরিতে আবদ্ধ করিতে, তাঁহার সাহস এবং উৎসাহের সীমা নাই।
প্রজার আকুল ক্রন্দন মাঝে মাঝে শান্তি-দেবীর কর্ণে প্রবেশ করে। সে স্বামীকে অনুযোগ করিয়া কহে, “তুমি নিজে জমিদারি না দেখ্লে সব যে জ্বলে পুড়ে যায়।”
সুরেন্দ্রনাথের যেন চমক ভাঙ্গে, “তাই ত, তাই ত, এ সব কথা কি সত্য?”
“সত্য নয়! নিন্দায় যে দেশ ভরে গেল– তোমারই কাণে কেবল এ সব পৌঁছায় না। চব্বিশ ঘণ্টা ইয়ার নিয়ে বসে থাক্লে কি এ সব কথা কেউ শুন্তে পায়? কাজ নেই অমন ম্যানেজারে, দূর ক’রে তাড়িয়ে দাও।”
সুরেন্দ্র দুঃখিত হইয়া অপ্রতিভ হইয়া কহে, “তাই ত, কাল থেকে আমি নিজে সব দেখ্ব।” তাহার পর কিছুদিন জমিদারি দেখিবার তাড়া পড়িয়া যায়। মথুরনাথ ব্যস্ত হইয়া উঠেন, গম্ভীরভাবে কখন কহেন, “সুরেনবাবু, এমন কর্লে কি জমিদারি রাখ্তে পার্বে?”
সুরেন্দ্রনাথ শুষ্ক হাসি হাসিয়া কহে, “দুঃখীর রক্ত শুষে এমন জমিদারিতে কাজ কি, মথুরবাবু।”
“তবে আমাকে বিদায় দাও– আমি চলে যাই।”
সুরেন্দ্র অমনি নরম হইয়া যায়। তাহার পর যাহা ছিল, তাহাই হয়। সুরেন্দ্রনাথ বৈঠকখানা হইতে আর বাহির হয় না।