ভাব-গতিক দেখিয়া ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হ’ল?” সুরেন্দ্রনাথ সে কথার কোন উত্তর না দিয়া, একজন ভৃত্যকে ডাকিয়া কহিলেন, “একটা ভাল ঘোড়ায় শীঘ্র জিন কষিতে বল– আমি এখনি গোলাগাঁয় যাব। এখান থেকে গোলাগাঁ কতদূর জান?”
“প্রায় দশ ক্রোশ।” “এখন নয়টা বেজেচে– একটার মধ্যে পৌঁছিতে পার্ব।”
ঘোড়া আসিলে তাহাতে চড়িয়া বসিয়া কহিলেন, “কোন্ দিকে?” “উত্তর দিকে, পরে পশ্চিমে যেতে হবে।”
তাহার পর চাবুক খাইয়া ঘোড়া ছুটিয়া বাহির হইয়া গেল।
এ কথা শুনিয়া শান্তি ঠাকুরঘরে মাথা খুঁড়িয়া রক্ত বাহির করিল, “ঠাকুর,এই তোমার মনে ছিল! আর কি ফিরে পাব?”
তাহার পর দুজন পাইক ঘোড়ায় চড়িয়া গোলাগাঁ উদ্দেশে ছুঢিয়া গেল। জানালা দিয়া তাহা দেখিয়া শান্তি ক্রমাগত চক্ষু মুছিতে লাগিল। মা দুর্গা! জোড়া মোষ দেব– যা’ চাও, তাই দেব– তাঁকে ফিরিয়ে দাও– বুক চিরে রক্ত দেব– যত চাও– হে মা দুর্গা, যত চাও– যতক্ষণ না তোমার পিপাসা মিটে।
গোলাগাঁ পৌঁছিতে আর দুই ক্রোশ আছে। অশ্বের ক্ষুর পর্যন্ত ফেনায় ভরিয়া গিয়াছে। প্রাণপণে ধূলা উড়াইয়া, আল ডিঙ্গাইয়া, খানা টপ্কাইয়া ঘোড়া ছুটিয়া চলিয়াছে! মাথার উপর প্রচণ্ড সূর্য্য!
ঘোড়ার উপর থাকিয়াই সুরেন্দ্রের গা বমি-বমি করিয়া উঠিল; ভিতরের প্রত্যেক নাড়ী যেন ছিঁড়িয়া বাহির হইয়া পড়িবে! তাহার পর টপ্ করিয়া ফোঁটা দুই-তিন রক্ত কষ বহিয়া ধূলিধূসরিত