এ দেহে যতটুকু শক্তি আছে, সমস্ত অকাতরে ব্যয় করিয়া শেষে শয্যা আশ্রয় করিবে, আর উঠিবে না!
নদীর বাঁকের পাশে– একখানা নৌকা না? কল্মী শাকের দল কাটিয়া পথ করিতেছে! সুরেন্দ্র ডাকিল, “বড়দিদি!” শুষ্ককণ্ঠে শব্দ বাহির হইল না– শুধু দুই ফোঁটা রক্ত বাহির হইল।
“বড়দিদি”– আবার দুই ফোঁটা রক্ত।
কল্মীর দল নৌকার গতি রোধ করিতেছে। সুরেন্দ্র কাছে আসিয়া পড়িল!
আবার ডাকিল, “বড়দিদি।”
সমস্ত দিনের উপবাস ও মনঃকষ্টে মাধবী নির্জ্জীবের মত নিদ্রিত সন্তোষকুমারের পার্শ্বে চক্ষু মুদিয়া শুইয়াছিল। সহসা কানে শব্দ পোঁছিল; পুরাতন পরিচিত স্বরে কে ডাকে, না! মাধবী উঠিয়া বসিল। ভিতর হইতে মুখ বাড়াইয়া দেখিল। সর্ব্বাঙ্গে ধূলা-কাদা মাখা– মাষ্টারমহাশয় না?
“ও নয়নতারার মা, মাঝিকে শীগ্গির নৌকা লাগাতে বল্।”
সুরেন্দ্রনাথ তখন ধীরে ধীরে কাদার উপর শুইয়া পড়িতেছিল। সকলে মিলিয়া সুরেন্দ্রনাথকে ধরাধরি করিয়া নৌকায় তুলিয়া আনিল; মুখে-চোখে জল দিল। একজন মাঝি চিনিত, সে কহিল, “লাল্তা গাঁয়ের জমিদার।” মাধবী ইষ্ট-কবচ শুদ্ধ স্বর্ণহার কণ্ঠ হইতে খুলিয়া লইয়া তাহার হাতে দিয়া বলিল, “লাল্তাগাঁয়ে এই রাত্রে পৌছঁতে পার? সবাইকে এক একটা হার দেব।”
সোনার হার দেখিয়া তাহাদের মধ্যে তিনজন গুণ ঘাড়ে লইয়া নামিয়া পড়িল।