বনের পাখীর চেয়ে পিঞ্জরের পাখীটাই বেশী ছট্ফট্ করে! সুরেন্দ্র কল্পনার চক্ষে যেন একটু মুক্ত বায়ু, একটু স্বাধীনতার আলোক, দেখিতে পাইতেছিল, তাই তাহার পরাধীন প্রাণটা, উন্মত্তের মত, পিঞ্জরের চতুর্দ্দিকে ঝট্পট্ করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল।
সে পিতাকে আসিয়া নিবেদন করিল যে, তাহার বিলাত যাইবার উপায় করিয়া দিতে হইবে। তাহাতে যে সকল উন্নতির আশা ছিল– তাহাও সে কহিল। পিতা কহিলেন, ‘ভাবিয়া দেখিব।’ কিন্তু গৃহিণীর ইচ্ছা একেবারে প্রতিকূল। তিনি পিতা-পুত্রের মাঝখানে ঝড়ের মত আসিয়া পড়িয়া এমনি অট্টহাসি হাসিলেন যে, দুইজনেই স্তম্ভিত হইয়া গেল!
গৃহিণী কহিলেন, “তবে আমাকেও বিলাত পাঠাইয়া দাও–না হইলে সুরোকে সাম্লাইবে কে? যে জানে না, কখন্ কি খাইতে হয়, কখন্ কি পরিতে হয়, তাকে একলা বিলাত পাঠাইতেছ? বাড়ীর ঘোড়াটাকে সেখানে পাঠান যা, ওকে পাঠানও তাই। ঘোড়া-গরুতে বুঝিতে পারে যে, তার খিদে পেয়েছে, কি ঘুম পেয়েছে— তোমার সুরো তাও পারে না—” তার পর আবার হাসি!
হাস্যের আধিক্য দর্শনে রায় মহাশয় বিষম লজ্জিত হইয়া পড়িলেন। সুরেন্দ্রনাথও মনে করিল যে, এরূপ অকাট্য যুক্তির বিপক্ষে কোনরূপ প্রতিবাদ করা যায় না। বিলাত যাইবার আশা সে ত্যাগ করিল। তাহার বন্ধু এ কথা শুনিয়া বিশেষ দুঃখিত হইল। কিন্তু বিলাত যাইবার আর কোন উপায় আছে কি না, তাহাও সে বলিয়া দিতে পারিল না। কিন্তু অবশেষে কহিল যে, এরূপ পরাধীন-