পাতা:বনবাণী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৮৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বনবাণী

হাওয়াতে চলে কানাকানি। পড়তে পারি নে সব অক্ষর, কিন্তু চিঠিখানা মনের ঠিকানায় এসে পৌঁছয়। লুকিয়েই ও ধরা দেবে, এমনিতরো ওর ভাবখানা।

সে কি ভাবে, গােপন রবে লুকিয়ে হৃদয়-কাড়া

 এইবার বেড়া ভাঙল, দুর্বার বেগে। অন্ধকারের গুহায় অগোচরে জমে উঠেছিল বন্যার উপক্রমণিকা, হঠাৎ ঝর্না ছুটে বেরোল, পাথর গেল ভেঙে, বাধা গেল ভেসে। “চরম যখন আসেন তখন এক-পা একপা পথ গুনে গুনে আসেন না। একেবারে বজ্রে-শান-দেওয়া বিদ্যুতের মতে, পুঞ্জ পুঞ্জ কালো মেঘের বক্ষ এক আঘাতে বিদীর্ণ করে আসেন।

হৃদয় আমার ঐ বুঝি তাের ফাল্গুনী ঢেউ আসে।
বেড়া-ভাঙার মাতন নামে উদ্দাম উল্লাসে।
তােমার মােহন এল সােহন বেশে,
কুয়াসাভার গেল ভেসে—
এল তােমার সাধনধন উদার আশ্বাসে।
অরণ্যে তাের সুর ছিল না, বাতাস হিমে ভরা।
জীর্ণ পাতায় কীর্ণ কানন, পুষ্পবিহীন ধরা।
এবার জাগ্‌ রে হতাশ, আয় রে ছুটে
অবসাদের বাঁধন টুটে-
বুঝি এল তােমার পথের সাথি উতল উচ্ছ্বাসে।

 উৎসবের সোনার কাঠি তোমাকে ছুঁয়েছে, চোখ খুলেছে। এইবার সময় হল চার দিক দেখে নেবার। আজ দেখতে পাবে, ঐ শিশু হয়ে এসেছে চিরনবীন, কিশলয়ে তার ছেলেখেলা জমাবার জন্যে। দোসর হয়ে তার সঙ্গে যোগ দিল ঐ সূর্যের আলো; সেও সাজল শিশু, সারাবেলা সে কেবল ঝিকিমিকি করছে। ঐ তার কলপ্রলাপ। ওদের নাচে নাচে মর্মরিত হয়ে উঠল প্রাণগীতিকার প্রথম ধুয়োটি।

ওরা অকারণে চঞ্চল

 আবার একবার চেয়ে দেখো- অবজ্ঞায় চোখ ঝাপসা হয়ে থাকে,

১৮৮