সূচনা
বরেন্দ্রের (বর্ত্তমান উত্তর বঙ্গের) সকল প্রকার লোক-তত্ত্ব ও পুরা-তত্ত্ব উদ্ধার মানস করিয়া আমি আমার স্ত্রী কিরণ লেখা রায়ের উপর বরেন্দ্রে প্রচলিত প্রবাদ, ব্রত-কথা, উপকথা, রন্ধন-প্রথা, ‘স্ত্রী-আচার’ প্রভৃতি লৌকিক ও সামাজিক তথ্য সংগ্রহ কার্য্যের ভারার্পণ করি। তিনি এই সংগ্রহ কার্য্যে অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার পর গত ১৩২৫ বঙ্গাব্দের কার্ত্তিক মাসে সহসা কালগ্রাসে পতিত হয়েন; সুতরাং তাঁহার আরদ্ধ কার্য্য আর শেষ করিয়া যাইতে পারেন নাই। এক্ষণে তাঁহার সকল শ্রম ও যত্ন ব্যর্থ হইবার উপক্রম হয় দেখিয়া আমি ভ্রাতুষ্কন্যা কলাণীয়া শ্রীমতী ঊষাপ্রভা এবং কন্যা কল্যাণীয়া শ্রীমতী ললিতার অনুরোধে, তাঁহার সযত্ন সংগৃহীত রন্ধন সম্বন্ধীয় নোট গুলি গ্রন্থাকারে নিবদ্ধ করিয়া ‘বরেন্দ্র রন্ধন’ নাম দিয়া। প্রকাশ করিলাম।
বরেন্দ্রে প্রচলিত রন্ধন-প্রণালী ব্যতিরেকে আমার স্ত্রী বারাণসী[১] প্রভৃতি স্থানে যে দুই চারিটি অপরবিধ রন্ধন শিক্ষা করিয়াছিলেন নোট মধ্যে থাকায় তাহাও এই গ্রন্থ মধ্যে সন্নিবিষ্ট করিলাম। বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় এবং শ্রীযুক্ত প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর নির্দ্দিষ্ট পন্থা অনুসরণ করিয়া ও আধুনিক রুচির প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া আধুনিক রন্ধন হিসাবে এই গ্রন্থকে পূর্ণাবয়ব করিবার নিমিত্ত সচরাচর প্রচলিত কতিপয় ইউরোপীয় এবং ইসলামীয় রন্ধনও এই গ্রন্থ মধ্যে লিপিবদ্ধ করা গেল। বরেন্দ্র বহির্ভূত এই সকল রন্ধনগুলি বরেন্দ্র প্রচলিত রন্ধন হইতে যাহাতে চিনিয়া লইবার ব্যাঘাত না ঘটে তন্নিমিত্ত প্রতিস্থলে তাহা স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
- ↑ আমার পত্নীর কৈশোর ও শেষ-জীবন বারাণসীতে অতিবাহিত হয়।