পাতা:বরেন্দ্র রন্ধন.djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অধ্যায়-ভাজি।
৫৫

সংস্কৃত বা পক্ব মাংস দেবতাদিগকে নিবেদন করিয়া (স্বয়ং) ভোজন করি লেন।” (জয়মঙ্গলের টীকা দ্রষ্টব্য)। পাঠক পাঠিকা লক্ষ্য করিবেন, হোমকারী অর্থাৎ পরমশুদ্ধাচারী দ্বিজাতি আর্যসন্তান, এমন কি বর্তমান ক্ষেত্রে স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র, শূল্য উখ্য ভেদে বিবিধ প্রকারে পক্ব মাংস আহার করিলেন। কেমন করিয়া আহার করিলেন?—না, দেবসাৎ কৃত্বা—দেবতাগণকে নিবেদন করিয়া আহার করিলেন। তাহা হইলেই দেখা যাইতেছে যে পরমনৈষ্ঠিক হিন্দুসন্তানের পক্ষেও তৎকালে শূল্য উখ্য ভেদে পক্ব মাংস অর্থাৎ বর্ত্তমানে যাহাকে কাবাবাদি বলা যাইতেছে তাহা ভোজন ত নিষিদ্ধ ছিলই না পরন্তু উহা দেবোদ্দেশে নিবেদন করাও প্রথা ছিল। বর্তমানকালেও ভারতের বহু প্রদেশে এমন কি নিজ বরেন্দ্রেও মাংসাহার প্রথা বিশেষভাবে প্রচলিত আছে এবং এই শ্লোকার্দ্ধে লিখিত শূল্য উখ্য ভেদে বিবিধ উপায়েই এখনও মাংস রন্ধন হইয়া থাকে। কিন্তু ইউরোপীয় এবং মুসলমানগণের মধ্যে মাংস রন্ধন বর্তমানে যেরূপ উৎকৃষ্ট হইয়া থাকে অম্মদ্দেশে তাদৃশ হয় না। আমরা এক্ষণে মাংস পাক একরূপ ভুলিয়া গিয়াছি বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সাধারণতঃ ‘কালিয়া’ ছাড়া অপর কোনও প্রকারে মাংস রন্ধনের চেষ্টা আমাদের মধ্যে আজিকালি আর বড় দেখা যায় না। এই নিমিত্ত এক্ষণে মাংস রন্ধন সম্বন্ধে লিখিতে হইলে বৈদেশিক রীতির আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নাই। মুসলমানী ‘কাবাব’ ‘কোপ্তা’ অথবা ইংরাজী ‘রোষ্ট কটলেট’ ‘চপ’ ‘স্টেক’ প্রভৃতি বলিলে যাহা বুঝায় আমি তাহা ‘শূল্য’ ‘উখ্য’ ভেদে বিভাগ করিয়া এই ‘কাবাব’ অধ্যায়ের অন্তর্গত করিয়া এখানে লিপিবদ্ধ করিলাম।

 শিক-কাবাবাদি যে হিন্দুর অতি প্রাচীন নিজস্ব খাদ্য তাহার বিশেষ প্রমাণ পাণিনির ৪।২।১৭ সূত্র—“শুলোখাদ্ যৎ।” অর্থাৎ-“শূলে সংস্কৃতং শূল্যং মাংসম। উখ্যম্।”

 মৎস্য বা মাংসে আবশ্যকমত ঝাল, নুণাদি ও তৎসহ ধৃত মাখিয়া