পাতা:বহুবিবাহ.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
বহুবিবাহ।

বুঝিতে পারেন, ঐ হতভাগা নারীদিগকে কত ক্লেশে কালযাপন করিতে হয়। তাঁহাদের যন্ত্রণার বিষয় চিন্তা করিলে, হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যায়, এবং যে হেতুতে তাঁহাদিগকে ঐ সমস্ত দুঃসহ ক্লেশ ও যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইতেছে, তা বিবেচনা করিয়া দেখিলে, মনুষ্যজাতির উপর অত্যন্ত অশ্রদ্ধা জন্মে। এক পক্ষের অমূলক অকিঞ্চিৎকর গৌরবলাভলোভ, অপর পক্ষের কিঞ্চিৎ অর্থলাভলোভ, সমস্ত অনর্থের মূলকারণ; এবং এই উভয় পক্ষ ভিন্ন দেশস্থ যাবতীয় লোকের এ বিষয়ে ঔদাস্য অবলম্বন উছার সহকারী কারণ। যাঁহাদের দোষে কুলীনকন্যাদের এই দুরবস্থা, যদি তাঁহাদের উপর সকলে অশ্রদ্ধা ও বিদ্বেষ প্রদর্শন করিতেন, তাহা হইলে, ক্রমে এই অসহ্য অত্যাচারের নিবারণ হইতে পারিত। অশ্রদ্ধা ও বিদ্বেষের কথা দূরে থাকুক, অত্যাচারকারীরা দেশস্থ লোকের নিকট, যার পর নাই, মাননীয় ও পুজনীয়। এমন স্থলে, রাজদ্বারে আবেদন ভিন্ন, কুলীনকামিনীদিগের দুরবস্থাবিমোচনের কি উপায় হইতে পারে। পৃথিবীর কোনও প্রদেশে স্ত্রীজাতির ঈদৃশী দুরবস্থা দেখিতে পাওয়া যায় না। যদি ধর্ম্ম থাকেন, রাজা বল্লালসেন ও দেবীবর ঘটক- বিশারদ নিঃসন্দেহ নরকগামী হইয়াছেন। ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশে, এবং পৃথিবীর অপরাপর প্রদেশেও বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত আছে। কিন্তু, তথায় বিবাহিতা নারীদিগকে, এতদ্দেশীয় কুলীনকামিনীদের মত, দুর্দশায় কালযাপন করিতে হয় না। তাহারা স্বামীর গৃহে বাস করিতে পায়, স্বামীর অবস্থানুরূপ সাচ্ছাদন পায়, এবং পর্যায়ক্রমে স্বামীর সহবাসসুখলাভ করিয়া থাকে। স্বামিগৃহবাস, স্বামিসহবাস, স্বামিদত্ত গ্রাসাচ্ছাদন কুলীনকন্যাদের স্বপ্নের অগোচর।

 এ দেশের ভঙ্গকুলীনদের মত পাষণ্ড ও পাতকী ভূমণ্ডলে নাই। তাঁহারা দয়া, ধর্ম, চক্ষুলজ্জা ও লোকলজ্জায় একবারে বর্জিত। তাঁহাদের চরিত্র অতি বিচিত্র। চরিত্রবিষয়ে তাঁহাদের উপমা দিবার