পাতা:বহুবিবাহ.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।
৭১

 অর্থলোভে কন্যাবিক্রয় ও কন্যাক্রয় করিয়া বিবাহকরা অতি জঘন্য ব্যবহার, ইহা সকলেই স্বীকার করিয়া থাকেন; যাঁহারা কন্যা বিক্রয় করেন, এবং যাঁহারা, কন্যা ক্রয় করিয়া, বিবাহ করেন, তাঁহারাও, সময়ে সময়ে, এই ক্রয়বিক্রয় ব্যবসায়কে অতি গর্হিত বলিয়া কীর্ত্তন করিয়া থাকেন। এই ব্যবহার, যার পর নাই, অধর্ম্মকর ও অনিষ্টকর, তাহাও সকলের বিলক্ষণ হৃদয়ঙ্গম হইয়া আছে। যদি আমাদের সামাজিক দোষসংশোধনে প্রবৃত্তি ও ক্ষমতা থাকিত, তাহা হইলে, এই কুৎসিত কাণ্ড এত দিন এ প্রদেশে প্রচলিত থাকিত না।

 ব্রাহ্মণজাতির কন্যাবিক্রয় ব্যবসায় অপেক্ষা, কায়স্থজাতির পুত্রবিক্রয় ব্যবসায় আরও ভয়ানক ব্যাপার। মধ্যবিধ ও হীনাবস্থ কায়স্থজাতির কন্যা হইলেই সর্ব্বনাশ। কন্যার যত বয়োবৃদ্ধি হয়, পিতার সর্ব্বশরীরের শোণিত শুষ্ক হইতে থাকে। যার কন্যা, তার সর্ব্বনাশ; যার পুত্র, তার পৌষমাস। বিবাহের সম্বন্ধ উপস্থিত হইলে, পুত্রবান্ ব্যক্তি অলঙ্কার, দানসামগ্রী প্রভৃতি উপলক্ষে পুত্রের এত মূল্য প্রার্থনা করেন, যে মধ্যবিধ ও হীনাবস্থ কায়স্থের পক্ষে কন্যাদায় হইতে উদ্ধার হওয়া দুর্ঘট হয়। এ বিষয়ে বরপক্ষ এরূপ নির্লজ্জ ও নৃশংস ব্যবহার করেন, যে তাঁহাদের উপর অত্যন্তু অশ্রদ্ধা জন্মে। কৌতুকের বিষয় এই, কন্যার বিবাহদিবার সময় যাঁহারা শশব্যস্ত ও বিপদ্গ্রস্ত হন; পুত্রের বিবাহদিবার সময়, তাঁহাদেরই আর একপ্রকার ভাবভঙ্গী হয়। এইরূপে, কায়স্থের কন্যার বিবাহের সময় মহাবিপদ, ও পুত্রের বিবাহের সময় মহোৎসব, জ্ঞান করেন। পুত্রবিক্রয় ব্যবসায় যে অতি কুৎসিত কর্ম্ম, তাহা কায়স্থমাত্রে স্বীকার করিয়া থাকেন। কিন্তু আপনার পুত্রের বিবাহের সময়, সে বোধও থাকে না, সে বিবেচনাও থাকে না। আশ্চর্য্যের বিষয় এই, যাঁহারা নিজে সুশিক্ষিত ও পুত্রকে সুশিক্ষিত করিতেছেন, এ ব্যবসায়ে তাঁহারাও নিতান্ত অল্প নির্দ্দয় নহেন। যে বালক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায়উত্তীর্ণ হইয়াছে;