পাতা:বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার - দ্বিতীয় পুস্তক.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ

ইহা স্থির করিয়া, রাজদ্বারে আবেদন করিবার অভিপ্রার করেন। তর্কবাচস্পতি মহাশয় এ বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রতিবাদী হইয়াছিলেন, এবং ধর্ম্মরক্ষিণী সভা অধর্ম্মাচরণে প্রবৃত্ত হইয়াছেন, আর তাঁহাদের সংস্রবে থাকা বিধেয় নহে, এই বিবেচনা করিয়া, ক্রোধভরে সভার সম্বন্ধ পরিত্যাগ করিয়াছেন। আমার আলোচনাপত্র প্রচারিত হইলে, ধর্ম্মরক্ষিণী সভার অধ্যক্ষেরা জানিতে পারিলেন, তর্কবাচস্পতি মহাশয়, কিছু দিন পূর্ব্বে, বহুবিবাহনিবারণবিষয়ে সবিশেষ উৎসাহী ও উদ্যোগী ছিলেন এবং বহুবিবাহনিবারণপ্রার্থনার আবেদনপত্রে নামস্বাক্ষর করিয়াছিলেন। ইতিপূর্ব্বে তিনি নিজে যাহা করিয়াছেন এক্ষণে তাঁহারা তাহাই করিতে সচেষ্ট হইয়াছেন; কিন্তু এই অপরাধে অধার্ম্মিকবোধে তাঁহাদের সংস্রব ত্যাগ করা আশ্চর্য্যের বিষয় জ্ঞান করিয়া, তাঁহারা উপহাস করিতে আরম্ভ করিয়াছেন। আমার লিখনদ্বারা পূর্ব্বকথা ব্যক্ত না হইলে, ধর্ম্মরক্ষিণী সভার অধ্যক্ষেরা তর্কবাচস্পতি মহাশয়ের পূর্ব্বতন আচরণ বিষয়ে বিন্দুবিসর্গও জানিতে পারিতেন না, এবং এপর্য্যন্ত তাহা অপ্রকাশ থাকিলে, তাঁহারা তাঁহাকে উপহাস করিবারও পথ পাইতেন না। সুতরাং, আমিই তাঁহাকে অপ্রতিভ করিয়াছি, এবং আমার দোষেই তাঁহাকে উপহাসাস্পদ হইতে হইয়াছে; এই অপরাধ ধরিয়া, যার পর নাই কুপিত হইয়াছেন, এবং আমার প্রচারিত বহুবিবাহবিষয়িণী ব্যবস্থা খণ্ডন করিয়া, আমায় অপদস্থ করিবার নিমিত্ত, বহুবিবাহবাদপুস্তক প্রচার করিয়াছেন। ধর্ম্মবুদ্ধির অধীন হইয়া, শাস্ত্রার্থ সংস্থাপনে প্রবৃত্ত হইলে, লোক যেরূপ আদরণীয় ও শ্রদ্ধাভাজন হয়েন; রোষবশে বিদ্বেষবুদ্ধির অধীন হইয়া, শাস্ত্রার্থবিপ্লাবনে প্রবৃত্ত হইলে, লোককে তদনুরূপ অনাদরণীয় ও অশ্রদ্ধাভাজন হইতে হয়। ফলতঃ, এই অলৌকিক আচরণ দ্বারা, তর্কবাচস্পতি মহাশয় যে রাগদ্বেষের নিতান্ত বশীভূত ও নিতান্ত অবিমৃশ্যকারী মনুষ্য, ইহারই সম্পূর্ণ পরিচয় প্রদান করা হইয়াছে।