পাতা:বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার - দ্বিতীয় পুস্তক.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
বহুবিবাহ।

প্রজাপতির্বৈ স্বাং দুহিতরমভ্যধ্যায় (৪২)।

[১]

ব্রহ্মা নিজ কন্যার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন।

 এরূপ বলিও না; কারণ, দেবচরিতের অনুকরণ করা ন্যায়ানুগত
 নহে। এজন্যই, বৌধায়ন কহিয়াছেন, “দেবগণ ও মুনিগণ যে
 সকল কর্ম্ম করিয়াছেন, মনুষ্যের পক্ষে তা করা কর্তব্য নহে;
 তাহারা শাস্ত্রোক্ত কর্ম্মই করিবেক”।

ধর্মশাস্ত্র প্রবর্ত্তক ঋষিদিগের মধ্যে অনেকেরই অবৈধ আচরণ দেখিতে পাওয়া যায়। তাঁহারা ধর্ম্মশাস্ত্রপ্রবর্ত্তক, এই হেতুতে তদীয় অবৈধ আচরণ শিষ্টাচার বলিয়া পরিগৃহীত হইতে পারে না। বৃহস্পতি ও পরাশর উভয়েই ধর্ম্মশাস্ত্র প্রবর্তক; বৃহস্পতি কামার্ত্ত হইয়া গর্ভবতী ভ্রাতৃভার্য্যা সম্ভোগ, আর পরাশর কামার্ত্ত হইয়া অবিবাহিত দাশকন্যা সম্ভোগ, করেন। ধর্ম্মশাস্ত্র প্রবর্ত্তক বলিয়া, ইহাদের এই অবৈধ আচরণ শিষ্টাচারস্থলে পরিগৃহীত হওয়া উচিত নহে। ধর্ম্মশাস্ত্র প্রবর্ত্তক হইলে, অবৈধ আচরণে প্রবৃত্ত হইতে পারেন না, এ কথা নিতান্তু হেয় ও অশ্রদ্ধেয়। অতএব, ধর্ম্মশাস্ত্র প্রবর্ত্তক কশ্যপ প্রভৃতি বহুভার্য্যা- বিবাহে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। কশ্যপ প্রভৃতির তাদৃশ আচারদর্শনে বহুভার্য্যাবিবাহপক্ষই যথার্থ শাস্ত্রার্থ বলিয়া অবধারিত হইতেছে, তর্কবাচম্পতি মহাশয়ের এই মীমাংসা শাস্ত্রানুযায়িনী ও ন্যায়ানুসারিণী হইতে পারে কি না, তাহা সকলে বিবেচনা করিয়া দেখিবেন। কলকথা এই, শিষ্টাচারবিশেষকে প্রমাণস্থলে পরিগৃহীত করা আবশ্যক হইলে, ঐ শিষ্টাচার শাস্ত্রীয় বিধি নিষেধের অনুযায়ী কি না, তাহার সবিশেষ অনুধাবন করিয়া দেখা কর্তব্য; নতুবা ইদানীন্তন লোকের যথেচ্ছ ব্যবহারকে শাস্ত্রমূলক আচার বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে, পূর্ব্বকালীন লোকের যথেচ্ছ ব্যবহারকে অবগীত শিষ্টাচার স্থলে প্রতিষ্ঠিত করিয়া তাহার দোহাই দিয়া, তদনুসারে শাস্ত্রের তাৎপর্য্য ব্যাখ্যা করা পণ্ডিতপদবাচ্য ব্যক্তির কদাচ উচিত নহে।


  1. (৪২) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, ৩ পঞ্চিকা, ৩৩ খণ্ড।