পাতা:বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার - দ্বিতীয় পুস্তক.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ
২২৭

সংস্কারের বশবর্ত্তী হইয়াই, এই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। যে ব্যক্তি নিজে শাস্ত্রজ্ঞ, তাঁহার মুখ হইতে এরূপ অপূর্ব্ব সিদ্ধান্তবাক্য নির্গত হওয়া সম্ভব নহে। কোনও সম্পন্ন ব্যক্তির বাটীতে মহাভারতের কথা হইয়াছিল। কথা সমাপ্ত হুইবার কিঞ্চিৎ কাল পরেই, বাটীর কর্ত্তা জানিতে পারিলেন, তাঁহার গৃহিণী ও পুত্রবধূ ব্যভিচারদোষে দূষিতা হইয়াছেন। তিনি, সাতিশয় কুপিত হইয়া, তিরস্কার করিতে আরম্ভ করিলে, গৃহিণী উত্তর দিলেন, আমি কুন্তী ঠাকুরাণীর, পুত্ত্রবধূ উত্তর দিলেন, আমি দ্রৌপদী ঠাকুরাণীর, দৃষ্টান্ত দেখিয়া চলিয়াছি। যদি বহুপুরুষসম্ভোগে দোষ থাকিত, তাহা হইলে ঐ দুই পুণ্যশীলা প্রাতঃস্মরণীয়া রাজমহিষী তাহা করিতেন না। তাঁহারা প্রত্যেকে পঞ্চ পুরুষে উপগতা হইয়াছিলেন; আমরা তাহার অতিরিক্ত করি নাই। বাটীর কর্ত্তা, গৃহিণী ও পুত্রবধূর উত্তরবাক্য শ্রবণ করিয়া, যেমন আপ্যায়িত হইয়াছিলেন; আমরাও, কবিরত্ন মহাশয়ের পূর্ব্বোক্ত সিদ্ধান্তবাক্য শ্রবণ করিয়া, তদনুরূপ আপ্যায়িত হইয়াছি। শাস্ত্র দেখিয়া, তাহার অর্থগ্রহ ও তাৎপর্য্যনির্ণয় করিয়া, মীমাংসা করা স্বতন্ত্র; আর, শাস্ত্রে কোন বিষয়ে কি বিধি ও কি নিষেধ আছে তাহা না জানিয়া, পুরাণের কাঁহিনী শুনিয়া, তদনুসারে মীমাংসা করা স্বতন্ত্র।

 “তাহাতেও যদি দোষশ্রুতি বলেন তবে সে অনাশ্রমী ন তিষ্ঠেদিত্যাদি বচন সাগ্নিক দ্বিজের প্রকরণে নিরগ্নি দ্বিজ বিষয় নহে যদি এক্ষণে ঐ বচন নিরগ্নি বিষয় কেহ লিখিয়া থাকেন তিনি ঐ ঋষির মূলসংহিতা না দেখিয়া লিখিয়াছেন” (২৬)[১]

যদি কেহ উল্লিখিত দক্ষবচনকে নিরগ্নিদ্বিজবিষয় বলিয়া ব্যবস্থা করিয়া থাকেন, তিনি ঋষির মূলসংহিতা দেখেন নাই; কবিরত্ন মহাশয় কি সাহসে ঈদৃশ অসঙ্গত নির্দ্দেশ করিলেন, বলিতে পারা যায় না।


  1. (২৬) বহুবিবাহরাহিত্যারাহিত্যনির্ণয়, ১৬ পৃষ্ঠা।