পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

冷)○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll (* 8 || মোঃ মোসলেম উদ্দিন গ্রাম-দিঘাপতিয়া নতুনপাড়া পোঃ-দিঘাপাতিয়া, নাটোর আমি ছিলাম বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সিপাহী। চার বৎসর আমি পশ্চিম পাকিস্তানে চাকুরী করেছি। পচিশে মার্চের কিছুদিন আগে আমি ভলান্টারী সার্ভিসে চিটাগাংয়ে আসি। সেখান থেকে আমি ছুটিতে বাড়িতে আসি। তারপর বঙ্গবন্ধুর আহবানে চাকুরীর চট্টগ্রামে যোগ দেই। ওখান থেকে ষোল শহর, কালিঘাট, ৭নং জেটিতে পশ্চিম পাকিস্তানী বর্বরদের সাথে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করি এবং তাদেরকে পর্যুদস্ত করি। পরবর্তীকালে সেখানের পতন ঘটলে এপ্রিল মাসের (৭১) ৫ তারিখে অনেক সঙ্গীসহ ওপার বাংলার আগরতলায় পৌছি। সেখান থেকে কিছু অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিফেন্স দেই। তারপর পাক সৈন্যরা বিমান আক্রমণ চালালে সকলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। এপ্রিল মাসের ২২ তারিখে স্বগ্রাম দিঘাপাতিয়ায় পৌছি। ২৪শে এপ্রিল আমার বাড়ির জনৈক পাক বাহিনীর সহযোগী একদল পাক সৈন্য এসে ঘরের দরজা কেন্দ্রভূমি ছিল। তারা সেখানে আমার হাত, পা বেঁধে পা উপরের দিকে তুলে লটকিয়ে অত্যাচার করে। সে পেত। তারা জানতে চাচ্ছিল যে চট্টগ্রামে আমি কতজন পাঞ্জাবীকে হত্যা করেছি, কতটি রাইফেল কোথায়, কিভাবে লুকিয়ে রেখেছি, বাংলাদেশ সম্পৰ্কীয় কি কি তথ্য আমি জানি। আমার কাছ থেকে কোন তথ্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হলে তারা আমাকে কালীবাড়ি থেকে নাটোরের ফুল বাগানে অপারেশন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে বৈদ্যুতিক শক আমার গলায় দেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে ডেকচির মধ্যে করে পানির হাউজে নিক্ষেপ করে। ১০-১২ মিনিট সেখানে রাখার পর অর্ধমৃত অবস্থায় সেখান থেকে তুলে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেখানেও তারা ব্যর্থ হবার পর আমাকে বেয়োনেট চার্জ করতে নিয়ে যায়। এ সময় ছিল সন্ধ্যার কিছু আগে। তখন আমার হাত পিছনে বাঁধা ছিল। বলা প্রয়োজন, এর কিছু আগে আমার সাক্ষতেই চারজন লোককে গুলি করে হত্যা করে। পরে আমাকে নিয়ে যায়। বেয়োনেটের সামনে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিলাম আর কৌশলে হাতের বাঁধন খুলবার চেষ্টা করছিলাম। এক সময় আমি আমার হাতের বাঁধন তাদের অগোচরেই খুলতে সমর্থ হই। ফুলবাগানের মধ্যস্থ পুকুরের চারিদিকে মিলিটারীরা তখন সশস্ত্র পাহারায় ছিল। হাতের বাঁধন খুলেই ঘুরে সঙ্গীন উচানো সিপাইয়ের হাতের রাইফেল কেড়ে পুকুরে ফেলে দেই এবং বক্সিং মেরে তাকে ধরাশয়ী করি। তারপর পুকুরে ঝাঁপ দেই। ইতিমধ্যে অবশিষ্ট সৈন্যরা পুকুরের চারিদিকে সচেষ্ট হয়ে উঠে এবং আমাকে লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলি চালানো শুরু করে। যখন পুকুরের পাড়ে উঠছিলাম ঠিক সে সময় একটি গুলি এসে আমার ডান কানে লাগে। সাথে সাথে আর একটি গুলিও আমার বাম বাহুর নিচে লাগে। এতে আমি অবশ্য খুব বেশী আহত হই না। তাদের সকলের সব রকমের অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে বর্বরদের ব্যুহ ভেদ করে পালিয়ে আখের জমির ভিতর দিয়ে ক্রলিং করে নাটোরে পৌছাই। শরীর দিয়ে তখন দরবিগলিত ধারায় রক্তপাত হচ্ছিল। উলঙ্গ অবস্থায় যখন নাটোরের সিনেমা হলের মোড়ে পৌছাই তখন একদল বিহারী আবার আমাকে ধরে ফেলে। সেখানেও তারা বেদম প্রহার করতে শুরু করে। পূর্বোক্ত