পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Այbr |լ আরিফুর রহমান (বাদশা) জেলা – বগুড়া জ্যৈষ্ঠ মাসের একদিন রাতে আমাদের বাড়ী ঘেরাও করে পাক সৈন্যরা আমাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে অবশ্য আমার বাড়ীর দামী জিনিসপত্র ও সোনাদানা লুটপাট করে। মিলিটারীদের সাথে কতিপয় অবাঙ্গালীও ছিল। তাদের মধ্যে বাঙ্গালীও থাকা সম্ভব। গ্রেফতার করার পর আমাকে সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা প্রয়োজন, আমার হাত বাঁধা অবস্থাতেই নেয়া হয়। পথের মধ্যেই কয়েক দফা চড়থাপ্পড় মারা হয়। সার্কিট হাউসে নেয়ার পর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, আমি মুক্তিবাহিনীকে খবর সরবরাহ করি। তারা আমার কাছ থেকে জানতে চায় যে, মুক্তিবাহিনী কোথায় আছে, তাদের সংখ্যা কত এবং তাদেরকে কিভাবে খবর সরবরাহ করি? আমি মুক্তিবাহিনীর লীডার না অন্য কেউ লিডার আছে? তার নাম কি? মুক্তি বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র কোথায় আছে? আমি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলে আমার উপর দৈহিক নির্যাতন শুরু করে। কয়েকজন মিলে পর্যায়ক্রমে আমাকে নানানভাবে অত্যাচার করতে থাকে। রুলার দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় বেদম প্রহার করে। শরীরের গিট ছাড়াও বিভিন্ন অংশে হৃদয়হীন ভাবে অত্যাচার করে। এ ছাড়া খাড়া করে পা টান করে রেখে পিঠ কজো অবস্থায় ঘাড় টান করে হাতের কজি দিয়ে ঘাড়ে মারত। শরীর একটু এদিক ওদিক করলে অথবা যন্ত্রণায় কাতরালে আরো বেশী করে অত্যাচার করতে থাকে। মারের সাথে সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এই অবস্থায় এত বেশী করে আমার উপর অত্যাচার করা হয়েছিল যে, আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া রাইফেলের বাট, গাদা, গুতা আর পিটান দিতে থাকে। এ ছাড়া লাথি তো আছেই। অত্যাচারের সময় তারা কয়েক পদে অত্যাচার করে। এরা উনিশ পদে অত্যাচার করত। তাদের সুবিধা মত কখনও তারা আমার হাত বেঁধে রাখত আবার কখনও পা খোলা রাখত। দুই দিন বন্দী থাকার পর শান্তি কমিটির সুপারিশে ছাড়া পাই। অবশ্য এ জন্য আমার আত্মীয়স্বজনকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। স্বাক্ষর/