পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

খান সেনা সবাইকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ধরলা নদীর তীরে চামারীর পেছনে আমাকেসহ হতভাগ্য ১১ জনকে নিয়ে আসে। বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়ে চানমারীর পেছনে যাবার সময় অসংখ্য মৃত লাশ আমার পায়ে লাগছিল। চানমারীর পেছনে সাবইকে লাইন করানো হয় এবং সাবাইকে বুকটান দিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। এক এবং দুই গোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি পেছন দিকে হেলে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হয় আমি তৎক্ষণাৎ মাটিতে শুয়ে পড়ে নিঃশ্বাস রুদ্ধ করে মৃতবৎ পড়ে থাকি। পাঞ্জাবীরা সবাইকে মৃত ভেবে চলে যায়। আমার তন্দ্রা কেটে গেলে বুঝতে পারি সৌভাগ্যক্রমে গুলিতে আহত হইনি। তবু আমি ভয়ে ৪-৫ ঘণ্টা মৃতবৎ পড়ে থাকি। চারদিকে একই সঙ্গে কুকুর এবং শৃগালের তুমুল কোলাহল চলছিল। রাত্র ১২টার দিকে হঠাৎ দড়িতে টান পড়লে আমি জ্ঞন ফিরে পেয়ে উঠে বসি, কে দড়ি টানছে। জিজ্ঞাসা করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন জীবন্ত ব্যক্তির কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। তার বাড়ী রংপুর জেলার গাইবান্ধা বলে জানায়। তার গায়ে গুলি লাগেনি বলে সে জানায়। অতঃপর উভয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পরষ্পরের সম্মুখীন হই এবং পরষ্পরের হাতে বাঁধন খুলে দিতে সাহায্য করি। উভয়ে মুক্ত হবার পর চোখের বাঁধন খুলি এবং চারদিকে তাকিয়ে কমপক্ষে ৪শত লাশ দেখতে পাই শৃগালগুলো চারপাশে ছোটাছুটি করছিল। উভয়ের নদীর তীরে উপস্থিত হই। গাইবান্ধার লোকটি সাঁতার দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। অতঃপর আমি তার হাত ধরে গা ভাসিয়ে দেই। নদীতে কয়েকবার লোকটি আমার হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল কিন্তু অতি কষ্টে পরস্পর পরস্পরকে ধরে রেখে নদী পার হতে সক্ষম হই। তীরে পৌঁছতেই ভোর হয়ে আসে। উভয়েই ভারতে আশ্রয় গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং ভারতের পশ্চিম বাংলার চৌধুরী হাটে প্রবেশ করি।

স্বাক্ষর/-
মোঃ মনোয়ার হোসেন
৩০/০৭/৭৩