পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: অষ্টম খণ্ড

॥৮৭॥
মোঃ লুৎফর রহমান
গ্রাম- মুন্সিপাড়া
থানা ও জেলা- দিনাজপুর

 জুলাই মাসের প্রথম দিকে ভারত হতে ফিরে আসার পরে লিলি সিনেমা হলের সামনে রাত্র ৮টার সময় ২ জন অবাঙ্গালী আবার আমাকে আটক করে। তারা বলে যে, তুমি মুক্তিযোদ্ধা, তোমার কাছে বোমা আছে, তুমি কতজন অবাঙ্গালীকে মেরেছ ইত্যাদি। তারা আমাকে মারতে মারতে তদানীন্তন সার্কিট তাউসে নিয়ে যায় এবং খান সেনাদের হাতে তুলে দেয়। খান সেনারা আমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করে যে তুমি কি কাজ কর? তার উত্তরে বলি যে আমি ‘পটকা’ আতসবাজী তৈরী করি। আমার উত্তরে খান সেনারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করে যে, পটকা কেয়া চিজ হ্যায়? উত্তরে আমি বলি যে, পটকা বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুটানো হয় আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য। কিন্তু খান সেনারা বলে যে তোম জুট বলতা হ্যায়, তোম ‘বোম' বানাতা হ্যায়। এই বলে তারা ভীষণ মারধর আরম্ভ করে এবং সিগারেট খেয়ে জ্বলন্ত সিগারেট আমার শরীরে চেপে ধরে। ঐ সময় ছোট চাকুর আমার হাতের তালুর উপর ঢুকিয়ে দেয়। হাত পিছনে বাঁধা অবস্থায় একটা অন্ধকার কক্ষে বন্দি করে রাখে। এ অবস্থায় দুই দিন আটক রাখে। দ্বিতীয় দিনে আমাকে কিছু রুটি খেতে দেয়।

 তৃতীয় দিনে আমাকে কোমরে রশি বেঁধে জেলখানায় নিয়ে আসে। আসার সময় তারা কিল, ঘুষি, লাথি, যে, যা পারে মারতে থাকে। জেলখানায় আসার পর আমাকে দুই হাতে রশি বেঁধে একটা ভিমের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। এই সময় আমাকে উলঙ্গ অবস্থায় রাখ হয়। ঝুলানো অবস্থায় হাণ্টার ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে প্রহার করতে থাকে। প্রহার করার সময় আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, মুক্তিযোদ্ধা কাহা হ্যাঁ, হাম লোক তোমাকে বোম দেগা তোম যাকে উলোকো মার ছাকেগা। উত্তরে বলি যে আমি যেতে পারব না। এতে আমার শাস্তি আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। মারধর করার পরে আমাকে জেলখানাতেই বন্দি করে রাখে।

 বলা প্রয়োজন যে, এই সময় একজন খান সেনা রাইফেলের বাঁট দিয়ে আমার মুখে আঘাত করে। ফলে আমার সামনের চারটা দাঁত ভেঙ্গে যায়। এই সময় আমার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এই অবস্থায় আমাকে চার মাস জেলে আটক রাখে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি জেল হতে বের হয়ে আসি।

স্বাক্ষর/-
লুৎফর রহমান