পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVG বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড I め○○ l মোঃ নজরুল ইসলাম বুলবুল গ্রাম- চরনবীপুর থানা- শাহজাদপুর জেলা-পাবনা ২৬শে এপ্রিল পাক বাহিনী বাঘাবাড়ী ঘাঁটি অতিক্রম করে বগুরার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বাঘাবাড়ী থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে বিরাট সাঁজোয়া বাহিনীর এই দলটি প্রতিরোধের আশঙ্কায় রাস্তার দু’ধারে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগুতে থাকে। ২৬শে এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে পাক বাহিনীর একটি দল করতোয়া নদীর পাড়ে গাড়াদহ খেয়াঘাটে তাবু খাটায়। এবং এখান থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবার চেষ্টা করে। এদিকে পাক বাহিনীর অপর একটি অগ্রগামী দল উল্লাপাড় ষ্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেন নিয়ে সিরাজগঞ্জের দিকে যাত্রা করে। পথে ঘাটিনা ব্রীজের কাছে তারা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুক্তিবাহিনী ব্রীজের অপর পাড় থেকে গেরিলা কায়দায় গুলি ছুড়তে থাকে। পাক সেনারা মুক্তিবাহিনীর এই অতর্কিত আক্রমণ বুঝতে পারেনি। ফলে যে ক’জন পাক সেনা ব্রীজ ভাল আছে কিনা দেখার জন্য ট্রেন থেকে নিচে নেমেছিল তারা সবাই নিহত হয়। এখানে নিহতের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জনের মত জানা গেছে। এরপর ট্রেনটি উল্লাপাড়া ষ্টেশনে ফিরে যায় এবং বিরাট একটা দল নিয়ে পুনরায় মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী তখন সেখানে ছিল না। ফলে আশেপাশের চার পটটি গ্রাম তারা পুড়িয়ে দেয়। গাড়াদহ খেয়াঘাট থেকে ঘাটিনা ব্রীজের দূরত্ব প্রায় ৫ মাইল। পাক বাহিনী মুক্তিবাহিনীর মোকবেলায় রকেট শেল ছুড়বার জন্য গাড়াদহে আস্তানা গাড়ে। এবং একদিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা রকেট শেল ছুড়তে থাকে। এদিকে আশেপাশের গ্রামের জনসাধারণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ীঘর ছেড়ে পালাতে থাকে। আশেপাশের গ্রাম থেকে লোকজন সরে যাওয়ায় লুটপাট যাতে না হয় সেজন্য চরনবীপুর প্রগতি সংঘের সদস্যবৃন্দ গ্রাম পাহারা দিতে থাকে। এসময় তারা গাড়াদহ বাজার লুট করে এবং বাজারের দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়।এই গ্রামের প্রায় এক ডজন (১২) নিম্ন ও মধ্য শ্রেণীর হিন্দু বাড়ী পাক বাহিনী জুলিয়ে দেয়। এবং রাস্তার আশেপাশে যাদেরকে পায় তাদের মারধর করে। এসময় অগ্রবর্তী দলটি উল্লাপাড়া ষ্টেশনে সি, এণ্ড, বি, এর ডাক বাংলোয় তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। এইদিন গাড়াদহ থেকে উল্লাপাড়া যাওয়ার দুর্গানগরের কাছে রাস্তার এক বৃদ্ধকে পাক বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। আমাদের চরনবীপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সামাদ তার শ্বশুরবাড়ী চড়িয়াতে ছিল। পাক বাহিনী এই গ্রামে ঢুকে গ্রামের প্রায় ৩০ জন লোককে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। আব্দুস সামাদ নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটি পুকুরের মধ্যে নেমে পড়ে এবং মাথা ডুবিয়ে থাকে। তার ছোট ছেলে বাবার খোঁজে পুকুর পাড়ে যায় এবং আব্বা আব্বা বলে ডাকতে থাকে। ঠিক এই সময় একজন পাক সেনা পুকুরের পাড়ে আসে এবং আব্দুস সামাদকে পুকুর থেকে ডাঙ্গায় তুলে। তাকে মুসলমান কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে সে মুসলমান বলে পরিচয় দেয় এবং পবিত্র কোরআন শরীফ থকে পড়ে শুনায়। এতেও পাক সেনাদের বিশ্বাস হয় না। পরে তাকে অজু করতে বলে। আব্দুস সামাদ যথারিতি অজু করে এবং তার গায়ে রাখা হাজী রুমালটি দিয়ে মাথা ঢাকে ও কালেমা পড়তে থাকে। কিন্তু এতে করেও পাক বাহিনী তাকে রেহাই দেয়নি। এই গ্রামের অন্য ত্রিশ জনের (৩০) সাথে তাকেও লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। সাক্ষর/নজরুল ইসলাম বুলবুল b/6/a8