পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ Գ Տ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |l XX & Il গ্রাম- রামেরচর জেলা- পাবনা ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে মুসলিম লীগের দালালদের চক্রান্তের ফলে ধারগড়া খান সেনাদের ক্যাম্প থেকে ১৭ জন খান সেনা ও ৭/৮ জন রাজাকার রাত্রি ৩টা ৩০ মিঃ সময় আমার বাড়ী ঘিরে ফেলে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, আমি স্থানীয় সলঙ্গা বাজারে একটি সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি, তাছাড়া আমার বাড়ীতেই মুক্তিরা গোপনে আস যাওয়া করত এবং আমি সৰ্বরকমে তাদেরকে সহায়তা করতাম-এই সংবাদ শ্রবণমাত্রই দালালরা আমার বাড়ীতে খান কুকুরদের লেলিয়ে দেয়। দুৰ্ভগ্যবশতঃ আমি ঐ রাত্রে নৌকা থেকে বাড়ীর উপর উঠতেই খান দসু্যরা আমাকে ধরে ফেলে। অতঃপর তারা আমাকে কিছুপথ ২০/২৫ হাজার টাকার সোনার গহনা খান কুকুরেরা নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নেওয়ার পর আমার চোখ-মুখ তোয়ালে দিয়ে বেঁধে মাথার উপর বালতি ভরে ভরে পানি ঢালা আরম্ভ করে। মুখ বেঁধে মাথার উপর পানি ঢাললে মানুষের কি অবস্থা হতে পারে ভুক্তভোগী ছাড়া কেউই বুঝতে পারে না। এমতবস্থায় আমি আর নিঃশ্বাস ফেলতে পারছিলাম না, ঠিক ঐ সময় সাহসের উপর ভরসা করে বা জীবন যায় যাবে এই মত করে আমি তোয়ালে মাথা থেকে টেনে ছিড়ে ফেলি। অতঃপর খান কুকুরেরা আমাকে মোটা একটি বাঁশ দিয়ে পিঠের উপর ভীষণভাবে আঘাত করতে থাকে। তাছাড়া রাইফেল ও বুটের লাথিতে আমার পিঠের চামড়া ছিড়ে যায়। পিঠে রক্ত জমে যায়। খান কুকুররা এমনভাবে বুট দিয়ে লাথি মারে যে, ঐ লাথি খেয়েই উপুর হয়ে পড়ে যাই এবং আমার ডান হাতখানি সম্পূর্ণরূপে ভেংগে যায়। এইভাবে আমাকে ভীষণ প্রহার করত। আমি যখন খান দসু্যদের ভীষণ মারপিটের ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়তাম তখন কুকুরেরা মারপিট বন্ধ করে দিত।প্রসংগতঃ বলা যেতে পারে যে, আমার সাথে আমার ছোট ভাই তোতাকেও ধরে নিয়ে যায়। এবং তাকেও রাইফেল, বুট ও লোহার রড দিয়ে ভীষণভাবে মারপিট করে। এমন ভাবে তারা মেরেছিল যে, আমার ছোট ভাইটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তার সারা দেহ যখমের দাগ ছিল। খান দসু্যরা আমার ছোট ভাইকে দিয়ে লোহার রডের সাহয্যে আমাকে পিটাত। যখন সে অস্বীকার করত তখন তাকেও বেদম মারপিট করত। বধ্য হয়ে সে সম্ভবত বড় ভাইকে মারপিট করত। অতঃপর দুই ভাইয়ের নিকট থেকে গোলবার ডাক্তার নামক এক ব্যাক্তিকে ধরে ভীষনভাবে মারপিট করে ছেড়ে দেয়। পরপরই তারা মাছুয়াকান্দি গ্রামে ঢুকে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরার জন্য। কোনও রকম মুক্তিযোদ্ধাকে না পেয়ে পুনরায় আমাদেরকে ধানগড়া ক্যাম্পে নিয়ে যায়। নেওয়ার পরেও দু’ভাইকে আবার বুটের লাথি দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে দেয়। প্রায় দুই রাত থাকার পর শান্তি কমিটির সদস্য মৌঃ আব্দুল করিম, মেীঃ গোলাম মাহমুদ ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি ও ছোট ভাই কোনরকমে প্রাণে বেঁচে বাড়ী চলে যাই। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, হত না। স্বাক্ষর/