পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ ԳՆ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | טי כ 3 | গ্রাম- ভেংড়ী থানা- উল্লাপাড়া তোলা জনসেবা শিবির। মা-বোনদের পল্লীতে রেখে পালিয়ে পালিয়ে উল্লাপাড়া এসে দেখলাম দসু্যরা বাঙ্গালী ভাইদের ধরে নিয়ে লুট করাচ্ছে ইচ্ছামত আবার গুলি করে বাঙ্গালী ভাইদের মারছে। বিকাল চারটার দিকে দেখতে পেলাম উল্লাপাড়ায় আগুনের লেলিহান, মনে হচ্ছে আগুনও যেন ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সমস্ত পাটের গুদাম, কলেজ, স্কুল, বাড়ীঘর দাউ দাউ করে জুলছে। মাঝে মাঝে শোন যাচ্ছে মানুষের আর্তনাদ। এই আগুনের লেলিহান ৩/৪ দিন উল্লাপাড়া, ঝিকিড়া, ঘোষগাতী, ঘাটিনা, চরঘটিনা ও অন্যান্য গ্রামকে এক এক করে গ্রাস করেছে, গাছপালাগুলো পুড়ে পুড়ে হা করে দাঁড়িয়ে আছে। এমন হয়েছে যেন উল্লাপাড়াতে একটা পাখী পর্যন্ত দসু্যদের দেখে ভয়ে সবাই পালিয়ে গেছে। এইভাবে ৭ দিন কাটতে না কাটতেই একদল কুচক্রীর দল দসু্যদের পিছু নিয়েছে। তারাও যেন দস্য হয়ে গেল। ১ মাসের মধ্যে দেখতে পেলাম দসু্যর দল বেশ ভারী হয়ে দানা বেঁধে উঠেছে। আমার বহু বন্ধুদের ধরে নিয়ে নিয়ে পাক দস্যদের হাতে দিচ্ছে আর দসু্যদল আমার বন্ধুদের একটু একটু করে তিলে তিলে মেরেছে। বঙ্গালী দস্যদল ওদের নাম দিয়েছিল শান্তি কমিটি, শান্তির নাম নিয়ে কত মা-বোনকে যে ওদের হাতে তুলে দিয়েছে তার হিসাব নাই। এই শান্তি কমিটির নায়ক ছিল কয়েকজন স্থানীয় অবাঙ্গালী ও কয়েকজন বাঙ্গালী। এইভাবে আমাদের স্মরণীয় দিনগুলি কাটতে লাগলো। ১ মাস, ২ মাস কেটে গেল। স্বাধীন বাংলার খবর শুনি, বুকে একটু বল পাই। জুনের ২৭ তারিখ ভোর ৫ টার সময় দেখতে পেলাম একদল লোক ছুটে আসছে। ভাইরা মন্তব্য করল পাক মিলিটারী হতে পারে? দেখতে না দেখতে ব্যাপরটা ফাঁস হয়ে গেল। সবাই ছুটে পালাতে লাগলাম কিন্তু হায় দেখি ভেংড়ী গ্রামের চারদিক দস্যদল ও বাঙ্গালী দস্যদল (শান্তি কমিটি) ঘিরে ফেলেছে। ছুটে গেলাম ব্যবসাইত পাড়ার ভিতর, ছোট জঙ্গলের ভিতর শুয়ে পড়লাম, কিন্তু দেখি আমাদের সুপরিচিত উল্লাপাড়ার কয়েকজন গুণ্ডা আমাকে দেখেই চিনে ফেলল। বলল শালা মালাউন পালিয়েছিস, বেরিয়ে আয়। নিরুপায় হয়ে এসে দেখলাম আমার বাবাকে ধরেছে, ভাইকে ধরেছে, বন্ধু অরুণকে ধরেছে, বন্ধু জীবনকে ধরেছে ও আর ৪ জনকে ধরেছে। দারুণ মার শুরু করে দিল। আমার বৃদ্ধ পিতাকে মারছে, বৃদ্ধ পিতা মার সহ্য করতে না পেরে আমার কোলে এসে আশ্রয় নিল। তখন আমাকে যে কতক্ষণ কি দিয়ে মেরেছে বলতে পারব না। ঘন্টাখানেক পরে জ্ঞান ফিরলে দেখলাম আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র লুট করে এনে জড়ো করেছে এবং দসু্যদল খাওয়া দাওয়া করেছে। দসু্যদল খাওয়া শেষ করে আমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে ১২ মাইল হটিয়ে হাঁটিয়ে সলঙ্গা নামক স্থানে নিয়ে গেল। ওখানে দেখতে পেলাম ৭০/৮০ জন পাকদসু্য ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করছে। আমাদের পেয়ে মনে হয় জীবিত মানুষগুলোকে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু দেখলাম আমাদের ট্রাকে তুলে উল্লাপাড়া ষ্টেশন ক্যাম্পে নিয়ে এলো। হাজার হাজার মিলিটারী দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে একজন পাক ক্যাপ্টেন বেরিয়ে এলো, বললো তোমাদের নাম লিখে দাও এবং একটি পেন ও ১ পিস কাগজ দিয়ে গেল। লিখে দেওয়ার পর আমাদের চারহাত-বাই চারহাত ঘরে রেখে দিল। একনকি দরজায় পর্যন্ত তারকাটা এটে দিল। মনে হলো আর কোনদিন দরজা খুলবে না। সারারাত্রি বসে বসে কাটাতে লাগলাম আর শুনতে পেলাম নারী কষ্ঠের আর্তনাদ, বুকফাটা কান্না, চাবুকের সপাংসপাং শব্দ, মদ্যপানের জড়ান জড়ান কথা, শুনে মন ভয়ে