পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ১৯২ ৷৷ মোঃ বজলুল করিম গ্রাম- দুর্গাপুর থানা- কুমারখালী জেলা- কুষ্টিয়া ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ রোজ মঙ্গলবার আমি বাজারে রেশন তোলার জন্য যাই এবং রেশন তুলে বাড়ী আসি। দুর্গাপুর স্কুলের সামনে মুজাহিদ ক্যাম্প ছিল। দ্বিতীয়বার বাজারে যাবার সময় “তোমাদের গ্রামে মুক্তিফৌজ আছে?” আমাকে আরও জিজ্ঞাসা করলো তোমার ভাই কোথায়? আমাদেরকে বলে দিতে হবে। উত্তরে আমি বললাম আমাদের গ্রামে কোন মুক্তি ফৌজ নাই এবং আমার বড় ভাই কোথায় তা আমি জানি না। তখন তারা আমাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়। তারপর তিনখানা বাঁশের লাঠি নিয়ে এসে আমাকে মারতে থাকে। মারের চোটে তিনখানা লাঠিই ভেঙ্গে যায়। মারের যন্ত্রণায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। আবার যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে তখন আনুমানিক বেলা চারটা। একজন বিহারী আমার নিকট আসে এবং আমার দুহাত বেঁধে ঘরের ধর্ণার সঙ্গে ঝুলিয়ে আবার বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রহার করতে থাকে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে আমাকে নামিয়ে মাটিতে ফেলে রাখে। তারপর আমার জ্ঞান ফিরলে আমি বললাম ভাই আমাকে এক গ্লাস পানি দেবেন? তখন সেই বিহারী উত্তর করলো, পানি হবে না। তখন তৃষ্ণায় আমি অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে থাকি। সে দিনই বিকাল ছটার সময় মিলিটারী, রাজাকার, মুজাহিদ ও বিহারী মিলে প্রায় ৫০-৬০ জন হাশেমপুর অপারেশন করে দু’জন লোককে ধরে নিয়ে দুর্গাপুর মুজাহিদ ক্যাম্পে আসে। তারা এসে আমাকে দেখে বলতে থাকে রানু কোথায় তোমাকে বলতেই হবে। আমি অস্বীকার করি, তখনই তারা কেউ তাদের মারের চোটে আমার সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। তারপর হাশেমপুর থেকে যে দুটো লোককে ধরে নিয়ে এসেছিল তাদেরকে আমার মত মেরে আমার সঙ্গে একই জায়গায় রেখে দেয়। তার পরদিন আবার তারা ঘাসখালী অপারেশনে যায় এবং ১৪ জন লোককে ধরে নিয়ে কুমারখালী থানা কাউন্সিলে রেখে দেয়। তাদের মধ্যে ছিল ৬ জন মুক্তিবাহিনীর, উক্ত ৬ জন অস্ত্র সমেত ধরা পড়ে। এর মধ্যে আমার আব্বা আমাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের নিকট যান। কিন্তু চেয়ারম্যান বলে আগামী কাল যা হয় করা যাবে। তখন রাতে যাওয়া ভাল হয় না। আমার আব্বা ফিরে চলে আসেন। এর মধ্যে রাতে আমরা দেখতে পাই স্কুলের পূর্বে পার্শ্বে দুটি এবং পশ্চিম পার্শ্বে ১টা কবর খোঁড়া হয়েছে। তখন আমরা মরার জন্য দিন গুনছিলাম। আমার পিতা আমার মামাকে আমার জন্য চেষ্টা করতে বললেন। আমার মামার এক বন্ধু যশোর ক্যান্টনমেন্টের মিলিটারী ইনসপেক্টর ছিলেন। মামা তার কাছে টেলিফোন করেন এবং আমার সম্বন্ধে সবকিছু বিস্তারিত বলেন। তখন ইনসপেক্টর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের নিকট ফোন করেন এবং একটা লিখিত চিঠি পাঠান আমাকে মুক্তি দেবার জন্য। তারপর বেলা ১২টার সময় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং মেজর এসে আমাকে ডাকে। আমি উত্তর করি আমি হেঁটে যেতে পারি না, কারণ আমার সারা শরীর মারের চোটে ফুলে গেছে এবং ব্যথা করছে সর্বাঙ্গ। তখন একজন মিলিটারী আমার নিকট পাঠিয়ে দেয়। আমি তার কাঁধে ভর দিয়ে মেজরের নিকট যাই। তারপর মেজর আমাকে বলে “তুমি মুক্তি”। তখন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে বলে “তোমার ছেলেকে নিয়ে যাও”। আমার পিতা আমাকে নেবার জন্য একটা রিক্সা ভাড়া করেন। কিন্তু রিক্সায় উঠার মত অবস্থা আমার ছিল না বলে আমি রিক্সাওয়ালাকে ফিরিয়ে দেই এবং আব্বার কাধে ভর দিয়ে বাড়ী আসি। বাড়ীতে আসার পর