পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

こQ& বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լ Ջo8 լ উষা রাণী মল্লিক গ্রাম- জুলুঘাট, ডাকঘর- মোশানি থানা- স্বরূপকাঠি, জেলা- বরিশাল ২২শে বৈশাখ ঝালকাঠি থেকে রাজাকার ও মিলিটারী স্বরুপকাঠি থানাতে আসে। প্রথম দিন স্বরূপকাঠি থানাতে প্রবেশ করে ১৪ জন হিন্দু পুরুষ ছেলেকে পাক বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। পাক বাহিনী আমাদের বাড়ীর পাশেই জুলুঘাট স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে। পাক বাহিনী আসার ৩ দিন পর আমি প্রায় ২ মাস দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থেকে শেষে বাধ্য হয়ে আমাদের গ্রামে ফিরে আসি। হিন্দু বলে লোকে আমাদের জায়গা দিতে চাইতো না। ঠিক মত খাবার মিলতো না, লোকের কাছে চেয়ে চেয়ে খেতে হতো। সব জায়গায় ঐ একই কথা, মিলিটারী আসবে পালাও রাজাকাররা রাত্রের অন্ধকারে গ্রামে গ্রামে ঢুকে বহু যুবতী সুন্দর সুন্দর নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং ধরে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেছে। এই সময় তারা পুরুষদেরকে ধরে নিয়ে যায় এবং সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। যাকে একবার ধরে নিয়ে যেত সে আর ফিরে আসতো না। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি একদিন পাক বাহিনী ও রাজাকাররা আমাদের গ্রাম আক্রমণ করে। আমার বাড়ীর পিছনে কলাবাগানের মধ্যে লুকিয়ে থেকে সব কিছু দেখছিলাম। আমার বাড়ীর উপর দিয়ে আমার পাশের বাড়ীতে ঢুকে পাক বাহিনী দুইজন মেয়েছেলেকে ধরে ফেলে এবং ঘরের ভিতর জোর করে নিয়ে যায়। আমরা ঝোঁপের ভিতর থেকে দেখতে থাকি কিন্তু করার কিছুই থাকে না। মেয়ে দুইটাকে যখন ঘরের ভিতর দুইটার করুণ চিৎকার ভেসে আসতে থাকে। দুইটা মেয়ের উপর পর পর ৪ জন মিলিটারী ধর্ষণ করে। মিলিটারী চলে যাবার পর আমরা মেয়ে দুইটার কাছে যেয়ে দেখি তারা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের সারা শরীরে ক্ষতের চিহ্ন। পরনের কাপড় দুরে রয়েছে। সে এক করুণ দৃশ্য। তারা ঐ দিন গ্রাম থেকে আরও কয়েকজন মেয়েকে ধরে নিয়ে যায় ক্যান্টনমেন্টে। পাক বাহিনী থাকাকালে তারা প্রায়ই আমাদের গ্রামসহ আগে পাশের গ্রামগুলিতে আসতো। তাদের আসার খবর পেলেই সব লোক যে যেদিকে পারতো পালাতো। রাজাকাররা এই সময় সব জায়গায় খুঁজে খুঁজে অনেককে আবার ধর্ষণ করার পর ফেলে রেখে যেত। শেষের দিকে রাজাকারদের অত্যাচার চরমে ওঠে। তারা প্রত্যেক দিন গ্রামের ভিতর যেতে থাকে এবং যেখানে যাকে পায় তাকেই মারতে থাকে। তখন বাধ্য হয়ে বাড়ী ছেড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে থাকি। দেশ স্বাধীন হবার পর চারিদিকে আনন্দের সাড়া পড়ে যায়। মানুষ সব কষ্ট ভুলে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। স্বাক্ষর/ উষা রাণী মল্লিক ২০/৮/৭৩