পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৬ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড lこの" l মোঃ মেমবর আলী সরদার অসহযোগ আন্দোলনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা দেখিয়েছে। আমরা অফিস আদালত বন্ধ করে আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেই। আমি গোসল করতে যাবার সময় দেখি যে দুই ব্যক্তিদের তাদের এক সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। তাদের রাস্তায় ফেলে চলে যায়। বাগেরহাট ডাক বাংলোয় ঘাটে আমি চার/পাঁচজন মানুষকে এক সাথে হত্যা করতে দেখেছি। তার মধ্যে দুই একজন তখনো জীবিত ছিল। তারা রাস্তায় মানুষ দেখলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতো বাঁচবার আশায়। কিন্তু তাদের সাহায্য করলে পাক বাহিনী সাহায্যকরীকেও হত্যা করতো। মানুষ মুৰ্মযু ব্যাক্তিকেও সাহায্য করতে পারতো না এই বর্বর পাক সেনাদের ভয়ে। একদিন দুজন নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যা করে তারা ডাক বাংলোয় সামনে ঝুলিয়ে রেখে পিঠে কাগজ লাগিয়ে লিখে রেখেছে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় নক্সাল। তাদের পিঠ রাস্তার দিকে দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। এইভাবে মৃত ব্যক্তিদের দেখিয়ে অমানুষিক ও বর্বরোচিত কার্য করে মানুষকে ত্রাসের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করেছে। একদিন দুজন যুবককে ধরে নিয়ে আসলো। শুনলাম তাঁরা মুক্তিফৌজ। পাক বাহিনীর একটি জাহাজ মাইন দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে বাগেরহাটে এসে রাত কাটানোর সময় স্থানীয় দালাল দ্বারা ধৃত হয়ে পাক বাহিনীর হাতে পড়ে। তাদের ধরে নিয়ে এসে তাদের উপর অমানষিক নির্যাতন চালায়। বেদম প্রহার করে তাদের নিকট মুক্তিফৌজের বিভিন্ন গোপন সংবাদ জানার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাদের গোপন তথ্য ও সঙ্গীদের নাম শত অত্যাচারেও প্রকাশ করেনি। তার মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তেও বলেছে তোমরা আমাদের মেরে ফেলতে পারো কিন্তু আমি আমরা গোপন তথ্য ও সঙ্গিদের নাম বলবো না। পাকিস্তানী সেনারা তাদের পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার জন্য চাপ সৃষ্টি করলেও তারা জয়বাংলা বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। ওয়াপদার রেষ্ট হাউজ ও ব্যারাকের সমস্ত এলাকা পাক বাহিনী দখল করে সেখানে শক্তিশালী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। আমার নিবাস ছিল উক্ত ক্যাম্পের অতি নিকটে। সুতরাং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবস্থায় আমি পাক বাহিনীর ধ্বংসাত্মক ও নির্যাতনের বহু দৃশ্য দেখেছি। রায় সাহেব কিরণ চন্দ্র দাস মহাশয়ের বাড়ীতে একটি একদল পাক বাহিনী প্রবেশ করে । তারা রায় সাহেবকে তার বাড়ির গোপন স্থান সমূহ দেখাতে বলে, তিনি তা পালন করেন। পরে তাকে বলে যে ওটা কি? যখন তিনি সেই দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছেন তখন গুলি করে তাকে হত্যা করা হয় এবং তার বাড়ির সমস্ত মূল্যবান জিনিস লুট করে নিয়ে যায়। ভোলা বোস নামে এক ব্যাক্তিকে আহারের সময় গুলি করে হত্যা করে। ভোলা বোসের আহার সমাপ্ত করার অনুরোধও উপেক্ষিত হয় এই বর্বরদের কাছে।