পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbra বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ২২৮ ॥ গ্রাম- পশ্চিম শাকপুরা থানা-বোয়ালখালী জেলা- চট্টগ্রাম সেদিন ছিল ২০ শে এপ্রিল। আমাদের পশ্চিম শাকপুরা গ্রামের উপর চলল পাক সেনার রক্ত নিয়ে হোলি খেলা আর নারী নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ। কি বীভৎস ঘটনা। আজ সেদিনের কথা মনে পড়লে আর মুক্ত বাংলার পবিত্র মাটিতে পাক সহযোগীদের এবং দালালদের বিনা বিচারে বিনা সাজায় আমাদের হত্যা করেছিল, বাড়ী পুড়িয়েছিল, সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল, নিরপরাধ গ্রামবাসীর গলায় ছুরি চালিয়েছিল, সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল, নিরপরাধ গ্রামবাসীর গলায় ছুরি চালিয়েছিল তারাই আবার বাংলার পবিত্র মাটিতে বাস করছে। ২০শে এপ্রিল সূর্য ওঠার আগে অন্যান্য দিনের মত কয়েকজনকে পাহারায় দিয়ে আমরা একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ সবাই হৈ চৈ করে পালাতে লাগল। শুনতে পারলাম পাঞ্জাবীরা আসছে। তখনই তাড়াতাড়ি যে যেদিকে পারি পালাতে লাগলাম। স্থানীয় মুসলমানদের বাড়ী গেলে তারাও তাদের বাড়ী হতে নামিয়ে দিল। আমরা তখন অন্যদিকে সরে পড়লাম। পাক সেনারা তখন চারদিক দিয়ে আমাদের গ্রাম ঘিরে ফেলল। তারপর সারাদিন চলল আমাদের গ্রামের উপর অত্যাচার। প্রতি বাড়ীতে বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দিতে লাগল এর সোনা, রূপা, রেড়িও মূল্যবান জিনিস হস্তগত করতে লাগল এবং চলল অকথ্য নির্যাতন, ধর্ষণ হত্যা, লুণ্ঠন- সবকিছু গ্রামের যুবক বৃদ্ধ যাকে পেল তাকেই হত্যা, স্ত্রী সামনে স্বামীকে হত্যা করল, মায়ের সামনে ছেলেকে হত্যা করল। আর করল অগ্নিসংযোগ। চারদিকে শুধু গুলির আওয়াজ আর গুলি করার সাথে সাথে পাক সেনাদের পৈশাচিক হাসি। সারাদিন পর বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তারা গ্রাম ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। আমরা যারা দৌড়ে পলায়ন করেছিলাম তারা আসলাম গ্রামে, দেখলাম প্রায় বাড়ীতে আগুনে ভস্মীভূত দালান ঘরের টিনগুলো পড়ে গেছে। কয়েকজন সবে মাত্র গুপ্তস্থান হতে বের হয়ে আসলো, কারো মুখে কোন কথা নেই। পথ দিয়ে ঘুরতে লাগলাম। দেখলাম গুলি খেয়ে রাস্তার আশেপাশে বাড়ীর প্রাঙ্গণে নর্দমায় পড়ে আছে মৃতদেহ কি এক হত্যাযজ্ঞ সবাই আমার আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী। হায় কি দোষ! কোনদিন দেখিনি এভাবে হত্যা দেখলাম বাপ ছেলে একসাথে এক বুকে গুলি খেয়ে ঘুমিয়ে আছে। দেখলাম কারো চোখে জল নেই, আজ সবাই পাথর হয়ে গেছে। আরো দেখলাম স্ত্রী চেয়ে রয়েছে স্বামীর দিকে, মা তাকিয়ে আছে মৃত সন্তানের দিকে। স্বামী তার স্ত্রীকে ডেকে বলার সময় পায়নি, মা সন্তানকে জাগিয়ে দেবার সময় পায়নি, বোন ভাইকে ডাক দেবার সময় পায়নি। কি পাশবিক হত্যা, নির্যাতন ও আর এ ঘটনাকে ভাষায় রূপ দেওয়ার ভার আপনাদের । তারপর গ্রামের কয়েকজন মৃত দেহের কিছু কিছু সৎকাজ করার নিস্ফল চেষ্টা করতে লাগলাম মাত্র। গ্রামে প্রায় ১৫০ জন লোক মারা গেল। যেই আমরা গর্ত খুঁড়তে লাগলাম আর অমনি প্রতিবেশী গুণ্ডারা লুট করার জন্য এগিয়ে আসতে লাগল আর বলতে লাগল পাক সৈন্য আবার আসছে। পুনরায় আমরা গ্রাম হতে বের হয়ে পড়লাম। এরই মধ্যে আমরা কোন রকমে এক গর্তের ভিতরে থেকে ১০/১২ জনকে মাটিচাপা দিলাম। আর সেই মুহুর্তে আমার মনে পড়ল হাতিয়ার ঘূর্ণিঝড়ে উপদ্রুত এলাকার কথা। সেখানে আমরা ওদের দাফনের