পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ΦΣ Σ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ી ૨( ૭ | মোঃ আব্দুল হাদি গ্রামঃ- পূর্ব চর চান্দিয়া থানা- সোনাগাজী পাক বাহিনী যখন সোনাগাজী থানা এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দখল করিয়া বসিল তখন আমি আমার পরিবারসহ সোনাগাজী থানার পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রাম হইতে আত্মরক্ষার জন্য দূরবর্তী আত্মীয় বাড়ীতে আশ্রয় লইয়া প্রায় এক মাস অতিবাহিত করি। কিন্তু মুক্তি বাহিনীরা হঠাৎ করে প্রবল আক্রমণ চালাইয়া সোনাগাজী থানা শত্রমুক্ত করে এবং পাক বাহিনীদের ও রাজাকারদের বিতাড়িত করে। এইভাবে মুক্তিবাহিনী প্রথমে উক্ত সোনাগাজী থানা শক্রমুক্ত করে। তখন আমি আমার আত্মীয় বাড়ী হইতে পরিবারসহ আমার নিজ বাড়ীতে আসি। বাড়ীতে কয়েক দিন অবস্থানের পর পাক বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী চারিদিক হইতে সোনাগাজী থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে এবং প্রবল আক্রমণ চালায়। এই প্রবল আত্রমণের সম্মুখে মুক্তিবাহিনী নাজেহাল হইয়া পড়ে এবং সোনাগাজী থানা ছাড়িয়া দিয়া আত্মরক্ষা জন্য ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়ে এবং পাক ও রাজাকার বাহিনী সোনাগাজী থানা দখল করে। সোনাগাজী থানা দখল করার পর থানার পাশ্ববর্তী গ্রামগুলি তল্লাশী চালাইয়া মুক্তি বাহিনীদের বাহির করার জন্য তাহারা ছড়াইয়া পড়ে। ৫ই রোজার দিনে রাজাকার ও পাক বাহিনী পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামের জনসাধারন প্রাণের ভয়ে বাড়ী ঘর ছাড়িয়া পলায়ন করে। আমিও পাক বাহিনীদের আসা দেখিয়া বাড়ীর পুরুষ মানুষ সব বাড়ী ছাড়িয়া আত্ম রক্ষা করি। পাক হানাদার বাহিনীরা যুবক ছাত্র দেখিলে মুক্তিযোদ্ধা বলিয়া সন্দেহজনকভাবে গুলি করিয়া হত্যা করে। কিন্তু আমার বাড়ীর পরিবারবর্গ বাড়ী হইতে বাহির কারবার সময়টুকু পাই না। তাই বাড়ীতে নিজের স্ত্রীকেও ফেলিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয়া পড়ি। তারপর বাড়ীর কোন খোঁজখবর লইতে পারি নাই। পাক হানাদার বাহিনীরা বাড়ী তল্লাশী করিয়া চলিয়া গেলে বাড়ী রওয়ানা হই। বাড়ী গিয়া দেখি যে আমার স্ত্রী অজ্ঞান অবস্থায় পড়িয়া আছে। পাশে আমার মা তাহার মাথায় পানি ঢালিতেছেন। আমিও আসিয়া মাথায় পানি ঢালি। আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরিয়া আসে। তারপর আমার স্ত্রীকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করি। আমার স্ত্রী আমাকে কয়েকজন রাজাকার ও ৩জন পাক বাহিনী আমাদের বাড়ীর মধ্যে ঢোকে এবং বাড়ীর আনাচে-কানাচে খোঁজাখোঁজি আরম্ভ করে। তখন আমি আমার মার হাত ধরিয়া বাড়ীর পিছনে ঝোঁপের আড়ালে দাড়াইয়া আছি। রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীরা আমাদের ঘরের মধ্যে তন্নতন্ন করিয়া তল্লাশী করে ও বাড়ীর পিছনে যায় এবং আমার মাকে প্রথমে দেখিতে পায় এবং পরে আমাকেও দেখিয়া ফেলে। প্রথমে একজন পাক হানাদার আমার মার হাত হইতে আমাকে ছিনিয়া আনে এবং জোর পূর্বক টানিয়া ঘরের মধ্যে লইয়া যায়। আমার মা অনেক অনুরোধ ও কান্নাকাটি করিতেছেন। আমি অনেক অনুনয় বিনয় ও চিৎকার করিতেছি কিন্তু কিছুতেই পাক হানাদার বাহিনীরা আমার এবং আমার মার কোন কথায় কর্ণপাত করিল না। বরং আমার মাকে ঘর হইতে রাহির করিয়া দরজা আটকাইয়া দিল এবং দুইজন পাক হানাদার বাহিনী দরজায় পাহারা দিতে লাগিল। প্রথম জন আমাকে পাইয়া আনন্দে আত্মহারা হইয়া গেল এবং আমাকে অমানুষিক উপায়ে আমার শরীরের উপর দৈহিক নির্যাতন চালাইল। এইভাবে পরপর তিনজন নরপশু আমার শরীরের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করে এবং পরে জ্ঞান হারাইয়া গেলে আমাকে ফেলিয়া চলিয়া যায়। এই ভাবে আমাকে দুইবার আমার শরীরের উপর নিমর্মভাবে পৈশাচিক উপায়ে অত্যাচার করে। স্বাক্ষর/মোঃ আব্দুল হাদি।