পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○〉br বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড lこQh l সামসুদ্দীন আহমদ বুকিং ক্লার্ক শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে ষ্টেশন সিলেট ২১শে মে তারিখ শ্রীমঙ্গলের পথে গাড়িতে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, তারপর পায়ে হাঁটিয়া প্রায় ৩৫ মাইল অতিক্রম করিয়া রেলওয়ে ষ্টেশন রশিদপুর ২২ তারিখ আশ্রয় নেই। সেখানে পৌঁছিয়াই আমরা বিপদে আসন্ন বলিয়া আভাস পাইতে থাকি। আমাকে নাকি শ্রীমঙ্গলে পাক হানাদার বাহিনী খোঁজাখুঁজি করে । আমার আর সামনে পা দেওয়া উচিত নহে বলিয়া রশিদপুরস্থ রেলওয়ে কর্মীবৃন্দ হশিয়ার করে। এত দূর আসিয়া বাসা বা পুরাতন ভূত্যের সন্ধান মিলিবে না বুঝিয়া ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়ি। একটা ট্রেন শ্রীমঙ্গল অভিমুখে যাইতেছে দেখিয়া (২৩.৫.৭১ তাং) উঠিয়া পড়ি এবং পরবর্তী ষ্টেশন সাতগাঁ যাইয়া নামিয়া পড়ি। সেখান হইতে সরাসরি আমার ষ্টেশন শ্রীমঙ্গলে কথা বলার সুযোগ পাইয়া সহকমী এবং ষ্টেশন মাষ্টার সাহেবের সাথে কর্থাবার্তা বলিয়াছিলাম। আমি ও দিনের ক্লান্ত দেহে খাইয়া অনেকটা কাহিল হইয়া পড়ি এবং ষ্টেশন ব্রিডিং কক্ষে বিশ্রাম করিতে ছিলাম। বেলা তখন হয়তো বা আড়াইটা। আতর্কিতে আমার সামনে বিভিন্ন ভারী ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ও তিনজন সৈনিক উপস্থিত এবং আমার নাম ধরিয়া সন্ধান জানিতে চাহে তখন আমার মুখে কথা সরিতে ছিল না, মনে হইতেছিল যেন আমার পায়ের নিচের মাটি সরিয়া যাইতেছে। ক্ষণেকের মধ্যে ষ্টেশন মাষ্টার সাহেবও আসিয়া উপস্থিত এবং আমারই নাম সামসুদ্দিন জীপে উঠাইয়া আমাকে একটা বড় রকমের আসামি হিসেবে ঘিরিয়া রাখে। আধ ঘন্টার মধ্যে তাহারা আমাকে শ্রীমঙ্গল ওয়াপদান্থ তাহদের সামরিক আইন হেড কোয়ার্টারে নিয়া আসে। করেন। তাহার জিজ্ঞাসাবাদের সংক্ষিপ্ত বিষয় ছিল চাকুরীতে যোগদান করি নাই কেন, কয়জন অবাঙালী হত্যা করিয়াছি, সদ্য ভারত হইতে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং নিয়া আসিলাম কি না। মুক্তিবাহিনীর লোক কাহারা, তাহাদের কি পোষাক, তা ছাড়া শ্রীমঙ্গল ষ্টেশনের তৎকালীন অবাঙালী ষ্টেশন মাষ্টার আখতার ও তাহার আছে। তা ছাড়া তিনি আমাকে কয়েকজন সমাজকর্মীর নাম-ধাম, তাহদের আচার-ব্যবহার জিজ্ঞাসাবাদ একজন সৈনিক আসিয়া আমাকে কর্কশ স্বরে তাহার সহিত যাইতে বলে। আমি তৎক্ষণাৎ তাহার সহিত গেলাম। একটা রুমে নিয়া আমাকে বসিতে বলিল। চতুর্দিকে কেবল গোলাবারুদ আর অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া আর কিছু নাই। আমাকে বিষগ্ন দেখিয়া একজন বিকট চেহারাধারী সৈনিক বলিল যে, “যব এক দফে শের কা চক্কর মে আগিয়া আর যানা কাহা হ্যায়”। কয়েক মিনিট পর আমাকে সেই বিল্ডিং হইতে ২-৩ মিনিটের রাস্তা দূরে অন্য এক বিল্ডিংয়ের ত্রিতলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার সুপরিচিত একজন বাঙালী পুলিশের লোকের সাক্ষাৎ পাইলাম। সেই বাঙালী লোকটা ২-৩জন হানাদার বাহিনীর লোক আমাকে মাটিতে করিয়া প্রায় দুই-আড়াই ঘন্টা সময় ব্যয় করে। সন্ধ্যা সমাগত প্রায়, তখন আমাকে পার্শ্বস্থ একটা কামরায় ঢুকাইয়া বাহির হইতে তালাবদ্ধ করিয়া দিল। তখন আমার মানসিক অবস্থা কি তাহা আজ আর