পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

גסיסי বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাক-বাহিনীর ইকবাল হল আক্রমণের ওপর দৈনিক আজাদ ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারী,১৯৭২ দুটি প্রতিবেদন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম দুর্গ ইকবাল হল (নিজস্ব নিবন্ধকার) গ্যারেজের উন্মুক্ত ছাদে সটান হয়ে শুয়ে পড়লেন জিনাত আলী ও তার সঙ্গী তারেক, আব্দুর রউফ ও তার ছোট ভাই জগন্নাথ কলেজের ছাত্র মোফাজ্জেম হোসেন। আধ ঘন্টা পর অর্থাৎ একটা-দেড়টার দিকে শুরু হলো পাক হানাদারদের আক্রমণ। অন্ধকারে বুক চিরে ছুটছে বুলেট। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয় অস্ত্রের ভয়াল গর্জনে সমস্ত এলাকাটা প্রকম্পমান। অক্টোপাশের মতন হানাদাররা ঘিরে ফেলেছে হল এলাকা। কামান দাগছে, গ্রেনেড ছুড়ছে এক ধরনের আগুন বোমা। বোমাগুলো ফস করে জানালা দিয়ে ঢুকে ঘরের ভিতরে পড়তেই ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সে আগুনে কাপড়চোপড়, আসবাবপত্রসহ যত কিছু দাহ্যবস্ত এমনকি প্রতিরোধ দিয়ে যাচ্ছে। থ্রি নট থ্রির আওয়াজ শুনেই তা বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু যেভাবে আগুন হলের সমস্ত ঘরে তাতে কি করে বেশীক্ষণ আর ওদের পক্ষে প্রতিরোধ দেয়া সম্ভব হবে। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমেই হিস হিস করে ছড়িয়ে পড়ছে। এসেমব্রি হল ও পাঠাগারে আগুন জুলে উঠলো দাউ দাউ করে। পাশের রেল সড়কের বস্তিও জুলছে। ওদিক থেকে ভেসে আসছে মৃত্যু যন্ত্রণাকাতর মানুষের আর্তনাদ। আকাশের উড়ছে লাল নীল রংয়ের অনুসন্ধানী ফানুস। এক বিচিত্র ভৌতিক পরিবেশ। সারা নগরী যেন জুলছে জুলন্ত আগুনে, কামান, মর্টার গেনেড, আর যতসব স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের সম্মিলিত বীভৎস গর্জন বিভীষিকাময়তার জন্ম দিয়েছে। গ্যারেজের ছাদে ওরা শুয়ে আছে চারজন মৃতুশীতল অনুভূতি নিয়ে। মাথার আধহাত উপর দিয়ে বুলেটগুলো সব উড়ে যাচ্ছে। পানির ট্যাঙ্কিতে যেন বুলেটের খই ফুটছে। তারেক এর ফাঁকেও গড়িয়ে ছাদের এমাথা-ওমাথা ঘুরে শত্রর গতিবিধি লক্ষ্য করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কাউকেই হলের কাছাকাছি দেখতে পেলাম না। শুধু পড়লো হানাদাররা হলের ভিতরে প্রবেশ করেনি, করতে সাহস পায়নি। দূর থেকে এক যোগে দল তাক করে ছুড়ে দেয় ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট, কামানের গোলা, গ্রেনেড, মর্টার, রকেট। চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি দিয়ে ট্যাঙ্ক এসে থামলো পলাশির মোড়ে। শুরু হলো বিচিত্র শব্দে গোলাবর্ষণ। এমন শব্দ এর আগে কোন দিন কেই শোনেনি। হঠাৎ জিনাতের মনে হলো এই প্রচণ্ড অগ্নিশিখা আর ঘূর্নিঝড়ের মতো গোলাগুলির আবেষ্টিনীর মধ্যে পড়ে এখন কি করবে ঐ দূর্ধর্ষ তরুণ প্রতিরোধীরা বেরিয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই। মৃত্যু যে ওদের অক্টোপাশের মত ঘিরে ধরেছে সব দিক দিয়ে। স্বাধীনতার বেদীতে তাহলে ওরা আত্মহুতি দিল মহান মর্যাদায়? চোখ জোড়া আর্দ্র হয়ে এলো জিনাত আলীর। হঠাৎ নিজেদের কথাও তার মনে পড়লো। মৃত্যু তাদের ও চারিদিকে ঘিরে রয়েছে। ইকবাল হলের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রেল সড়কের বস্তিতে যখন আগুন লাগিয়ে দেয় হানাদার বাহিনী তখন বস্তিবাসী নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধ যুবা সবাই পাঁচিল ডিঙ্গিয়ে ছুটছিল হলে ভিতর দিকে আশ্রয়ের আশায়। এমনটা ওরা সবসময়ই করে, ঝড় বৃষ্টি বাদলার দিনে হোক আর কোন