পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○8○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড প্রশ্ন : আপনি কখন এই টেপ সবার সামনে প্রকাশ করলেন? উত্তর যুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস প্রতিদিন প্রতিমুহুর্তে আমার আতঙ্কের মধ্যে কেটেছে। কখন কে জেনে ফেলে। কখন আমি ধরা পড়ে যাই বা কখন এটা এসে নিয়ে যায়। এমনি মানসিক যন্ত্রণায় আমি ভুগছিলাম। যাহোক দেশ স্বাধীন হবার পরে ১৭ই ডিসেম্বর-এর দিকে আমি আস্তে আস্তে প্রকাশ করলাম আমার এই গোপন দলিলের কথা এবং ২/৩ দিন পরেই এটা আমি সবাইকে জানালাম ও কয়েকদিন পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্যদের এটা দেখালাম। এ খবর শুনে অনেক বিদেশী সাংবাদিক আমার কাছে বহু টাকার বিনিময়ে এই দলিলের অরজিনাল কপি অর্থাৎ আসল টেপ চাইলেন। 3 : আপনি কি রাজি হলেন? উত্তর : আমার রাজি হবার প্রশ্ন ওঠে না। অরিজিনাল কপি আমি হারালে সেটা আমার দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : নির্যাতনের এক অধ্যায় ংলার মানস সন্তানকে বিনাশ করতে কুখ্যাত পাক সামরিক চক্র ও তাদের অনুগ্রহলোভী সহযোগীরা যে ব্যাপক চক্রান্তে লিপ্ত হয় তার অন্যতম নিদর্শন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নির্যাতন। ২৫শে মার্চ রাত্রির নির্বিচারে হত্যা থেকে শুরু করে কয়েক পর্যায়ে এই নির্যাতন সংঘটিত হয় এবং ক্রমেই তা এক সুসংহত রূপ লাভ করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন চিন্তার অনুসারী ও খুনি সরকারের তোষামোদবিরোধী প্রতিটি শিক্ষক তাদের রোষানলে পতিত হয় ও শেষ আঘাতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তাদের সবাইকে হত্যা করার এক পরিকলপনা করা হয়। কিন্তু বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক আগেই দেশত্যাগ করায় ও পাক বাহিনীর আকস্মিক পরাজয় বরণে এই মহা পরিকল্পনার অংশবিশেষ মাত্র কার্যকরী হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নির্যাতনের একটি চিত্র নিচে দেওয়া গেল। মার্চ-এপ্রিলে যাদের হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ও তার কাছাকাছি সময়ে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারা হলেন- ১। ডঃ গবিন্দ চন্দ্র দেব, (দর্শন), ২ অধ্যক্ষ এ, এন, এম মনিরুজ্জামান (সংখ্যাতত্ত্ব) ৩। ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজী), ৪। ডঃ ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), ৫। জনাব এ, মুকতাদির (ভূবিদ্যা), ৬ জনাব শরাফত আলী (অংক), ৭ জনাব এ, আর, কে, খাদেম (পদার্থ বিদ্যা), ৮। শ্রী অনুদ্বেপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থ বিদ্যা), ৯। জনাব এম, সাদাত আলী (শিক্ষা গবেষণা), ১০। জনাব এম, এ, সাদেক (শিক্ষা ও গবেষণা)। চাকুরী থেকে বরখাস্ত পাকিস্তানী হানাদারেরা কয়েকজন শিক্ষককে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে। তারা হচ্ছেন- ১। ডঃ এ, বি, এম, হাবিবুল্লাহ (ইসলামে ইতিহাস) ২। ডঃ এনামুল হক (বাংলা)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেটের সদস্যপদ থেকে বহিস্কৃত হন-১। ডঃ এনামুল হক, ও ২। ডঃ কুদরত-ই-খুদা। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয় ও রমনা হাজতে, দ্বিতীয় রাজধানীতে অবস্থিত পিওডব্লিউ কেজ ও ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয় তারা হচ্ছেন- ১। ডঃ আবুল খয়ের (ইতিহাস-), ২। জনাব রফিকুল ইসলাম (বাংলা), ৩। জনাব আহসানুল হক (ইংরেজী), ৪। জনাব সাদউদ্দিন (সমাজ বিজ্ঞান), ৫। জনাব শহিদুল্লাহ (অঙ্ক), ৬। জনাব রাশিদুল হাসান (ইংরেজী)।