পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

שיקלסי বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড তারিখ শিরোনাম সূত্র \Ֆ|| : আর এক বধ্যভূমিত চট্টগ্রামের দামপাড়া নক বাংলা ৩ ফেব্রুয়ারা, ১৯৭২ আর এক বধ্যভূমি চট্টগ্রামের দামপাড়া নিজস্ব প্রতিনিধি চট্টগ্রাম, ২১ শে জানুয়ারী। এই শহরের দামপাড়াস্থ গরীবুল্লা শাহর মাজারের পাশে একটি লোমহর্ষক বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়েছে। গত ৩০ শে মার্চ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই বধ্যভূততে বর্বর পাক বাহিনী প্রায় কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে বধ্যভূমির স্থানটি আমাকে দেখিয়েছেন গরীবুল্লা মাজারের সংলগ্ন দোকানদার নাসির আহমদ। গত ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বধীন না হওয়া পর্যন্ত এই হত্যাযজ্ঞের ষোল আনাই তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি তাঁর দোকানেই ছিলেন। নাসির আহমদ আমাকে বলেছেন, গত ৩০শে মার্চ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টির দিন ছাড়া প্রত্যহ সন্ধ্যায় কড়া মিলিটারী পাহারায় পাঁচ থেকে ছয় ট্রাক বোঝাই লোক নিয়ে আসা হত। এই হতভগ্যাদের চোখ কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকতো। তাদের বধ্যভূমিতে নামিয়ে দিয়ে ট্রাকগুলি চলে যেতো। এই হতভাগ্যদের বধ্যভূমিতে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। তারপর অন্য একদল মিলিটারী ট্রাক নিয়ে বদ্যভূমিতে এসে লাশগুলি ট্রাক বোঝাই করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেত। নাসির আহমদ আমাকে আরো বলেছেন যে, নিয়মিত এই হত্যাযজ্ঞের শুরুতে লাশ পুতবার জন্য বধ্যভূমির পাশে একটি গভীর গর্ত খনন করা হয়। মাত্র কয়েক দিনে লাশে এই গভীর গর্ত ভর্তি হয়ে গেলে সদ্যমরা লাশগুলিকে ট্রাকে চড়িয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। আমার অনুরোধে নাসির আহমদ এই গর্তের মুখ থেকে সামান্য মাটি সরিয়ে পাঁচটি নরকংকাল উঠান। তাঁর মতে সেই গর্তে কমপক্ষে পাঁচ হাজার নরকংকাল রয়েছে। এই লোমহর্ষক বধ্যভূমি চারিদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। বধ্যভূমির চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রয়েছে হতভাগ্যদের জামাকাপড় জুতা প্রভৃতি। মাটিতে রয়েছে চাপ চাপ বিস্তর রক্তের দাগ যা প্রমাণ করেছে যে গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এখানে কয়েকশ লোককে হত্যা করা হয়েছে। বধ্যভূমির পাশে হাঁটার সময়ে মাটিতে আমি গোটাদশ সুন্টও দেখতে পেয়েছি। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রেলওয়ে পোর্ট ট্রাষ্ট এবং অন্যান্য অফিসের যে সব হতভাগ্য অফিসার নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের অনেককেই এই বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়েছে। নাসির আহমদের মতে অত্যাচারের কালো দিনগুলোতে বর্বর পাক বাহিনী এই বধ্যভূমিতে কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছে। তিনি বলেছেন যে, নিয়মিত এই হত্যাযজ্ঞের শুরুতে চোখ বাঁধা অবস্থায় বধ্যভূমিতে আনা এক দল লোককে গুলি করে হত্যা করলে গুলির আওয়াজে হতভাগ্যদের লাইন করে দাঁড়ানো অন্যদল মৃত্যুভয়ে চীৎকার করতো বলে পরে রাইফেলে সাইলেন্সার লাগিয়ে গুলি করে মারার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। নিয়মিত এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের আরও দুইজন সাক্ষী পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন গরীবুল্লা শাহর মাজারের দারোয়ান আব্দুল জব্বার।