পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՏԳ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড একটু আধটু যা পেতাম তাই খেয়ে বাঁচতাম। আমাদের দশ মণ চাল, ৮টা গরু, প্রায় হাজার টাকার বাসনপত্রাদি সব লুট করে নিয়ে গেছে ওরা। চোখের সামনে দেখতাম কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি। মাঝ মাঝে ভক্তরা গোপনে কিছু সাহায্য দিয়ে যেত। তাই দিয়ে চালিয়ে নিয়েছি। আশ্রমের পূর্বদিকের বাগানে (গুরুর প্রথম আস্তানা) দেখিয়ে সাধুবাবা বললেন-ঐ যে ওখানে একটা বদ্ধ কূপ আছে। প্রায় প্রতিদিনই করুণ কান্নার আওয়াজ আমি শনেছি। একদিন এক ছোট শিশু, বাবা মা, বাঁচাও-বাঁচাও করে চীৎকার করছিল। ঐ ছেলেটাকে জবাই করে কূপে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি প্রায় প্রতিদিনই এরকম চীৎকার শুনেছি। সাধুবাবার অনুরোধে আমি বদ্ধকূপে হিংস্রতার অনেক চিত্র দেখেছি। আজো এই বাগানের একটি ঘরের দেয়ালে দেয়ালে মানুষের রক্ত লেগে আছে। কূপে নরকংকাল আর মাথার খুলিগুলো এখনো দেখা যায়। কত নিরাপরাধ, ণিষ্পাপ মানুষ এখানে জল্লাদদের হাতে বলি হয়েছে কে তার হিসাব দিতে পারে? বগুড়া শহরের অতি পুরাতন এবং সবার পরিচিত সাধুর আশ্রম আজ আবার ভক্ত আর গুণগ্রাহীদের আগমনে ভরে উঠেছে। কিন্তু আশ্রমের সেই পরিচিত মুখগুলো আর নেই। জিজ্ঞেস করলাম দেশ সম্বন্ধে। আপনি কি ভাবছেন? উত্তরে তিনি শুধু বললেন, ওরা খুবই বেআইনী কাজ করেছে। ওরা গণভোট মানে না। শেখ মুজিবকে ক্ষমতা না দিয়ে তারা খুবই অন্যায় করেছিল। ওরা অত্যাচারী। অত্যাচারীকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।’ আশ্রমের মন্দিরে গুরুদের আস্তানা দেখিয়ে সাধুবাবা বললেন, “আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়েরা এমনিভাবেই থাকত। কিন্তু দসু্যরা তাদের নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে। মাথায় তার ছোট জুটি বাঁধা। সামান্য সাদা কাপড়ের একটি গামছা তার পরনে। তিনি বললেন, পরের অন্যায় করা আমাদের নীতি নয়। তবুও ওরা আমাদের মেরেছে। বৃদ্ধ সাধু যুগোল কিশোর গোস্বামীই শুধু তার ভাইকে হারান নাই, বগুড়াবাসীও হারিয়েছে তাদের পরিচিত শ্বেতবস্ত্রধারী তিনটি ভাইকে। তারা আর আসবে না। বগুড়া রেলষ্টেশনের চারপাশেই ছিল জল্লাদদের কসাইখানা “তখন জুন মাসের বোধ হয় প্রথম সপ্তাহ রাত্রিবেলা শুয়ে আছি। হঠাৎ ইন্টার ক্লাশ ওয়েটিং রুমে থেকে ভেসে আসলো মানুষের করুণ আর্তনাদ। আমাকে বাঁচাও করে কে যেন চিৎকার করছিল। একটু পরেই থেমে গেল বুঝলাম, সে আর নেই।” কথাগুলো বলতে বলতে শিউরে উঠছিলেন বগুড়া রেলওয়ের একজন পদস্থ বাঙ্গালী কর্মচারী। জানতে চাইলেম আপনি দস্যদের আর কি নৃশংসতা দেখেছেন। উত্তরে তিনি জানালেন, “কি দেখি নাই বলুন। ওরা সব করেছে। বাঙ্গালীরা সবাই ছিল ওদের শক্র কেননা, যে বাঙ্গালীই রেলষ্টেশনের আশপাশে আসতো তাকেই তারা হত্যা করেছে। একদিন একজন নিরীহ বাঙ্গালীকে দিয়ে কয়েকজন মিলিটারী তাদের মালপত্র ট্রেনে উঠালো। তারপর কাজ শেষ হলে শুরু হলো তার উপর অমানুষিক অত্যাচার। একজন মিলিটারী লোকটাকে ওয়াগনের পিছনে নিয়ে দু’পা সমান করে পায়ের সঙ্গে মাথা লাগিয়ে বসিয়ে রাখলো। তারপর একজন উঠলো তার পিঠের উপর। জোর করে ওরা জীবন্ত মানুষটার হাড়গুলো এমনি করে ভেঙ্গে দিল। মানুষটার অনুরোধ আর মিনতি ওরা শুনে নাই। এরপর লোকটাকে আর ভাইদের মত করতো।” জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের ওরা কিছু বলেন নাই? উত্তরে তিনি বললেন, “বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বাঙ্গালী কর্মচারীদের ওরা ক্ষমা করে নাই। যারা সরতে পারে নাই তাদের মৃত্যু ছিল ওদের হাতে।” প্রসঙ্গক্রমে তিনি বললেন,” একদিন মেজর জাকী সামরিক হেডকোয়ার্টারে আমাকে ডাকলো। তারপর পাশের রুম থেকে রক্তমাখা কাপড় পরিহিত একজন বাঙালীকে ডেকে আনা হলো। তার হাত বাঁধা ছিল এবং মুখ