পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(ყyა বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ পীর-দরবেশরাও রেহাই পায়নি দৈনিক আজাদ ১১ মার্চ, ১৯৭২ পীর-দরবেশরাও কসাইদের হাত থেকে রেহাই পায়নি কইবুল্লা। উত্তর বাংলার আনাচে-কানাচে তার হাজার হাজার মুরীদ সাগরেদ। এর ছোট আরও ৩ ভাই। পীর এরাও। মাঝারি ধরনের বাড়ীটায় সর্বদা গমগম করতো শত শত দর্শণার্থী। কোরান পাঠ, মৌলুদ পাঠ, ওয়াজ নসিহত আর ওয়াক্তে ওয়াক্তে নামাজ-এক স্বগীয় পবিত্রতায় ভরে থাকতো এ পীর বাড়ী সারাক্ষণ। পীর হলে হবে কি। সবাই ‘প্রোগ্রেসিভ মাইনণ্ডেড’। একদিকে সামরিক জান্তা যখন ধর্মের দোহাই দিচ্ছে এবং অন্যদিকে লাখে লাখে মানুষ খুন করেছে, ইজ্জত লুট করেছে, মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন পীরবাবা। মুখ ফুটে কিছু বলতেন না, শুধু ডাকতেন আল্লাহকে... কাঁদতেন আর করুণা ভিক্ষা করতেন... আল্লাহ তুমি এই নিরপরাধী মানুষদের বাঁচাও... বাঁচাও সতী মা-বোনদের। ... আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছেন। বাঙ্গালী জাতিকে সর্বগ্রাসী ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তিনি... জয় ঘোষণা করেছেন মানবতার। কিন্তু পীরবাবা, তাঁর ভাই আর অন্যান্য কয়েকজন পারলেন না সে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে... দেখতে পেলেননা বাঙ্গালী আজ কতো খুশী। কসাই খানসেনাদের হাতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ দিতে হলো তাঁদের। পীর পবিবারের এক যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পচিশে মার্চের পর সে পালিয়ে যায় ও ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার নিযুক্ত হয়। খবর পায় মিলিটারীরা। তারা হঠাৎ গ্রাম ঘেরাও করে। তখন শেষ রাত। রমজান মাস। সেহরী সেরে এবাদতে মগ্ন হয়েছেন পীরবাবা। এক ভাই দুধ ভাত খেতে বসেছেন। একজন কাছের মসজিদে গিয়ে কোরান তেলাওয়াৎ করছিলেন... হঠাৎ বাড়ী ঘিরে ফেললো সামরিক জান্তারা, তারপর হঠাৎ গুলী। একে একে চার ভাইকে মাথায় গুলী করে নিষ্ঠুরভাবে মারলো ওরা। সেই সাথে আরও ১১ জন সাগরিদ। বড় হুজুর ঢলে পড়লেন, ত্যাগ করলেন শেষ নিঃশ্বাস। হাতে তার তসবীহ ধরা। অন্য এক ভাইয়ের সামনে দুধভাতের থালা। হাতের ভাত হাতেই রয়ে গেল। একজন গড়িয়ে পড়েছেন ওজুর ঘটির উপরই... সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য। ... পরদিন সকালের দৃশ্য আরও মর্মান্তিক, আরও হৃদয়বিদারক। পীর বাড়ীতে যেনো সৃষ্টি হলো কারবালা। শত শত ভক্তের ভিড়... লুটিয়ে পড়েছে ভক্তরা আঙ্গিনায়... চীৎকার করে কাঁদছে... গড়াগড়ি যাচ্ছে... বুক চাপড়াচ্ছে কেউ কেউ মৃতদেহের চারপাশের রক্তরঞ্জিত মাটি তুলে মাথায় মাখছে। দেখলে যে কোন লোকের চোখে জল আসে। ভক্তরা ওঁদের সৎকার করে। তারপর পীরবাড়ীর মুঠো মুঠো ধুলো মাটি নিয়ে যায়। এই পবিত্র মাটি ওরা সযত্নে তুলে রাখবে। এখানে কসাইরা একটি শিশুকেও নির্মমভাবে মেরেছে। সে পীর বংশেরই আগামী দিনের নাগরিক। দোলনায় ঘুমিয়ে ছিলো বাচ্চাটা খান সেনা কয়েকবার গুলী চালায় ঘুমন্ত বাচ্চাটার উপর। হায়, ইশ্বর! গোকুল গ্রামের তসিম পাড়ের জনৈক এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক। কালো বোরখা পরে মেয়ের সাজ নিয়ে সে মিলিটারীদের সাথে এখানে আসে ও পীরবাড়ী সনাক্ত করিয়ে দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে সে আদেশ নির্দেশও দিচ্ছিলো বলে জানা গেছে। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতাও এখানে তুচ্ছ।