পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ど l সুবেদার খলিলুর রহমান আর্মস এস আই, বি, আর পি, ১৯৭১ সনের ২৯শে মার্চ সকাল দশটায় আমরা মিল ব্যারাক পুলিম লাইনে উপস্থিত হয়ে আমাদের প্রিয় পুলিশ সুপার মিঃ ই, এ, চৌধুরী, পুলিশ কমাণ্ডেন্ট মিঃ হাবিবুর রহমান, ডি, এস, পি, লোদী সাহেব, রেঞ্জ রিজার্ভ ইন্সপেক্টর মিঃ সৈয়দ বজলুল হক, ডি, এস, পি, আব্দুস সালাম, রিজাভ ইন্সপেক্টর মিঃ মতিয়ুর রহমান সবাইকে উপস্থিত দেখলাম। মিঃ ই, এ, চৌধুরী সাহেব ক্ষুধার্ত, আহত, ক্ষতবিক্ষত সিপাহীদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। লাইনে মুহুর্তে কান্নার রোল পড়ে গেল। তিনি লাইনের মধ্যে প্রবেশ করে প্রতিটি সিপাহীর আহত, ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখলেন, তার দু'চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্র পড়ছিল। তিনি অবিলম্বে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তিনি বললেন, তোমাদের কোন অসুবিধা নাই, তোমরা নীরবে তোমাদের কাজ করে যাও।” আমি তোমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখবো। আমার সাথে আমার আরও তিনজন সুবেদার, সুবেদার সফিকুর রহমানের সহকর্মীর সাথে আটজন হাবিলদার- মোঃ ফজলুল হক, আঃ ওয়াদুদ, আব্দুল কুদ্দুস ও অন্যান্য বিশজন পুলিশ কনেষ্টবল দিয়ে ঢাকা কোতোয়ালী থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমরা থানায় প্রবেশ করে দেওয়ালে, মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত দেখতে পেলাম, দেখলাম থানার দেওয়াল গুলির আঘাতে ঝাঁজড়া হয়ে আছে, বুড়ঙ্গার পাড়ে অসংখ্য মানুষের মৃতদেহ পেলাম, আমাদের পি, এর, এফ, এর কনেষ্টবল আবু তাহেরের (নং ৭৯৮) পোশাকপরা লাশ ভাসছে, আরও বহু সিপাহীর ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখতে পেলাম। আমার চোখ বেয়ে অশ্র পড়ছিল, আমি দিশাহারা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমার প্রিয় সিপাহী তাহেরের লাশ ধরতে গেলে পিছন থেকে এক পাঞ্জাবী সেনা গৰ্জ্জন করে কর্কশ ভাবে বলতে থাকে “শূয়র কা বাচ্চা, তোমকো ভি পাকড়াতা হয়, কুত্তাকা বাচ্চা, তোম কোভি সাত মে গুলি করেগা” আমি আর্ম সাব ইন্সপেক্টর হওয়া সত্ত্বেও একজন সাধারণ পাক সেনা আমার সাথে কুকুরের মত ব্যবহার করলো। দুঃখে, অপমানে, লজ্জায় আমি যেন অবশ হয়ে পড়লাম। প্রতিবাদ করতে চাইলাম সর্বশক্তি দিয়ে কিন্তু পারলামনা। প্রতিবাদ করার কোন উপায় ছিল না। তাই ওদের অসহ্য আপত্তিকর কার্যকলাপের কোতোয়ালী থানার বরাবর সোজাসুজি গিয়ে বুড়ীগঙ্গার লঞ্চঘাটের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বুড়ীগঙ্গার পাড়ে লাশ, বিকৃত, ক্ষত-বিক্ষত, অসংখ্য মানুষের লাশ ভাসছে পুলিশের পোশাকপরা বীভৎস লাশ। দেখলাম বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ, বৃদ্ধা-যুবা, যুবক-যুবতী, বালক-বালিকা, কিশোর-শিশুর অসংখ্য লাশ। যতদূর আমার দৃষ্টি যায় দেখলাম বাদামতীল ঘাট থেকে শ্যামবাজার ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষের বীভৎস পচা ও বিকৃত লাশ, অনেক উলঙ্গ যুবতীর লাশ দেখলাম, এই পূত-পবিত্র বীরাঙ্গনাদের ক্ষত বিক্ষত যোনিপথ দেখে মনে হলো, পাঞ্জবী সেনারা কুকুরের মত ওদের পবিত্র দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদেরকে যথেচ্ছভাবে ধর্ষণ করে গুলিতে ঝাঁঝড়া করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। অনেক শিশুর ও ছোট ছোট বালক-বালিকাদের র্থেতলে যাওয়া লাশ দেখলাম। ওদেরকে পা ধরে মাটিতে আছড়িয়ে মারা হয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রুভরা চোখে আমি লাশ দেখলাম- লাশ আর লাশ-অসংখ্যা নিরীহ বাঙ্গালীর লাশ- প্রতিটি লাশে বেয়নেট ও বেটনের আঘাত দেখলাম, দেখলাম কারও মাথা চূৰ্ণবিচূর্ণ হয়ে আছে, পাকস্থলি সমেত হৃৎপিণ্ড বের করা হয়েছে, পায়ের গিট হাতের কজা ভাঙ্গা, ঝুলছে পানিতে। সদরঘাট টার্মিনালের শেডের মধ্যে প্রবেশ করে শুধু রক্ত আর রক্ত দেখলাম- দেখলাম