পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ ○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড তবুও লিলি চৌধুরী সিড়ি ধরে নীচে নামলেন। দেখলেন মুনীর চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন নীচে। আশেপাশে বন্দুক নিয়ে আরেকটি অল্প বয়সী ছেলে। তিনি শুনলেন, মুনীর চৌধুরী তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের অফিসার কোথায়? একথা বলার সাথে সাথে একটি ছেলে তাঁর পিঠের কাছে বন্দুক উচিয়ে বললো, আছে, আপনি চলুন। মুনীর চৌধুরী আস্তে আস্তে হেঁটে তাদের সাথে চলে গেলেন। অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী যুদ্ধ যখন পুরোদমে চলছে তখন মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সস্ত্রীক চলে গিয়েছিলেন ফয়জুল হকের বাসায়। শেরে বাংলার পরিবারের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু নিরিবিলি মানুষ মোফাজ্জল হায়দার ঐ বিরাট বাড়ীর হট্টগোলে থাকতে চাননি। আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেলেন মালিবাগে ছোট ভাই লুৎফুল হায়দার চৌধুরীর বাসায়। আল-বদর এবং রাজাকারেরা চৌদ্দই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রাটে তাঁর খোঁজ করলো। পেল না। পরে তাঁর তবলীগ পন্থী চাকরের কাছ থেকে মালিবাগের ঠিকানা জেনে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলো। চৌদ্দই ডিসেম্বর দুপুরের দিকে আল-বদররা এসে হাজির হলো লুৎফুল হায়দার চৌধুরীর বাসায়। দরজায় কড়া নাড়ার পর লুৎফুল হায়দার দরজা খুলে দিলেন। ‘মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী কোথায়?” ‘এখানেই আছেন।” “আমাদের অফিসার তাঁর সাথে কথা বলবেন, তাঁকে একটু ডেকে দিন।” লুৎফুল হায়দার ডেকে দিলেন। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সাথে তাঁর স্ত্রীও এলেন বাইরের ঘরে। স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের অফিসার কোথায়? ‘গাড়ীতে আছেন।” আপনারা যে তাঁকে নিতে এসেছেন, ওয়ারেন্ট আছে আপনাদের সাথে? মোফাজ্জল সাহেবের স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন। ‘আছে।’ “আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে?” ফের তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন। জানি না।’ বাঃ, এটা কেমন কথা।” স্ত্রী অবাক হলেন, ভয় পেলেন। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী তখন বললেন, ঠিক আছে আমি কাপড় পরে নেই।” বাথরুমে তাঁর গোসলের জন্য তখন গরম পানি তৈরী। কিন্তু তিনি আর গোসল করলেন না। স্ত্রী সুন্ট বের করে দিলেন। তিনি সুটি পরে আবার বাইরের ঘরে এলেন। তাঁর স্ত্রী তখন বললেন, “আমি ওর সঙ্গে যাবো।” একজন আল-বদর জওয়াব দিল, “আপনি তো আমাদের মায়ের মতো। আপনি আর কই যাবেন। আর উনি তো আমাদের স্যার। আমরা এখনই ওকে ফেরত দিয়ে যাবো।’ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী তখন হঠাৎ বললেন, “আমি চাট্টি খেয়ে নিতে পারি? “আমাদের ওখানে সব ব্যবস্থা আছে। আপনি চলুন।’