পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

HIV বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ডঃ সিরাজুল হক খান যুদ্ধ যখন চরম পর্যায়ে তখন ডঃ সিরাজুল হক খান পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতের বেলা ফ্রাটের নীচের তলায় থাকতেন। সকালে আবার দোতলায় নিজের ফ্রাটে চলে যেতেন। ১৪ই ডিসেম্বর খুব ভোরে তিনি ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়লেন। একবার ওপরে নিজের ফ্রাটে গেলেন তারপর আবার নীচে নেমে এলেন। এবং সে সময় তার নজরে পড়লো, একটু দূরে আল-বদর বাহিনীর কিছু লোক রুমাল দিয়ে এক ভদ্রলোকের চোখ বাঁধছে। সাথে সাথে তিনি ওপরে উঠে গেলেন। সবাইকে বললেন, ‘ওরা আমাদের এলাকায় ঢুকেছে৷ তোমরা সাবধানে থাকো।’ তাঁর স্ত্রী তখন তাঁর জন্য নিজের হাতে ঔষধ তৈরী করছেন। তিনি ডঃ খানকে ঔষধ খেতে ডাকলেন। জবাবে ডঃ খান ‘এসে খাবো’ বলে নীচের তলায় বোটানীর অধ্যাপক জনাব ইসমাইলের ড্রইংরুমে যেয়ে বসলেন। গল্প-গুজব করতে লাগলেন। এদিকে আল-বদর বাহিনী ওপর তলায় তাঁর ফ্লাটে এসে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো, “এটা ডঃ সিরাজুল হকের বাসা? ‘হ্যাঁ।’ তিনি কোথায়?” নীচে গেছেন।” ‘কোন বিভাগের অধ্যাপক তিনি।” শিক্ষা-গবেষণা কেন্দ্র।” ‘হ্যাঁ, আমরা তাকেই খুঁজছি।’ এই বলে তারা ডঃ খানের ভাইকে নিয়ে ইসমাইল সাহেবের ড্রইংরুমে উপস্থিত হলো। ডঃ খানকে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলো। তারপর তাঁকে ঘর থেকে বাইরে এনে, তাঁরই পকেটের রুমাল দিয়ে তাঁর চোখ বেঁধে অচেনা গন্তব্যের দিকে নিয়ে চললো। পরিবারের সবাই তাকিয়ে রইলো বিমূঢ় হয়ে। ডঃ খান স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন, নীচে থেকে এসে ঔষধ খাবেন। স্ত্রীর সাথে ঐ ছিলো তাঁর শেষ কথা। কিন্তু ঔষধ খেতে তিনি আর ফিরে আসেননি। ডঃ আবুল খায়ের ডঃ আবুল খায়ের সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত ছিল। একদিন রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ লাল বাতি। গাড়ী থামালেন। এদিকে লাল বাতি সবুজ হয়ে আবার লাল হয়ে গেছে, কিন্তু তিনি চুপচাপ গাড়ী নিয়ে বসে আছেন। এমন আপন-ভোলা লোককেও আল-বদররা চৌদ্দই ডিসেম্বর তুলে নিতে ভুলে যায়নি। ডঃ খায়েরের ফ্লাট নীচের তলায়। চৌদ্দই ডিসেম্বর সকাল আটটায় পায়জামা এবং শার্ট পরে, স্ত্রীর নিয়ে নিরাপদে কোন জায়গায় চলে যাবেন। এমনি সময় আল-বদরের লোকেরা এসে হাজির। তারা তাঁকে ঐ ডঃ খায়ের তাঁর স্ত্রীকে কিছু বলে যেতে পারেননি। আল-বদরের লোকের সঙ্গে কি কথা হচ্ছিল তাও কেউ শোনেনি।