পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○のbr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পড়লে সে জনাব হোসেনের নাম এবং পেশা জানতে চায়। সিরাজ সাহেব জানান যে তিনি পত্রিকায় চাকরি করেন। তখন তারা তাকে বেডরুম থেকে বারান্দায় নিয়ে আসে। এরপর দুষ্কৃতকারীরা জনাব হোসেনের ছেলেকে একটি ন্যাপকিন আনতে বলে, পরিবারের সবাইকে ভিতরের বেডরুমে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারপর সিরাজউদ্দিন হোসেনকে একটি গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। কোথায় কেউ জানে না। গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ১৪ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। ঢাকা শহরে তখন চলছে একটানা কারফিউ। সকাল সাড়ে সাতটা একটা মাইক্রোবাস এসে দাঁড়াল হলের হাউস টিউটরদের বাসার সামনে। বাস থেকে সশস্ত্র ৩/৪ জন লোক নেমে দাঁড়াল। তারা ছিল ইউনিফর্ম পরা। তাদের দুইজন এসে প্রথমে নীচতলায় পরিসংখ্যান বিভাগের বজলুল হক সাহেবের বাসায় তল্লাশী চালায়। এরপর তারা উপর তলায় আমাদের দরজায় আঘাত করতে থাকে আমার স্বামী (জনাব নুরুল হক সরকারী চাকুরে) দরজা খুলে দেন। একজন বন্দুক হাতে কাল মুখোশ পরা তাঁর বুকের সাথে বন্দুক লাগিয়ে জিজ্ঞেস করল, গিয়াস উদ্দিন কে? উনি বল্লেন, বাসায় নেই, হলের কাজে গেছেন। লোক দুটো তখন বলে, আপনি চলুন। আমাদের সাথে, তাঁকে খুজে বের করে দেবেন। আমরা থাকতাম আজিমপুর কলোনীতে। কলোনীতে মিলিটারী আসায় ভাই -এর বাসায় আমরা চলে আসি। আমার স্বামী তাদের বলল, আমরা এখানে নতুন এসেছি, হলের কোন কিছু জানি না। তারা বলল ভিতরে চলুন, এখানে গিয়াস উদ্দীন সাহেব থাকতেন। ভাই এর কামরায় এসে ওরা সমস্ত রুম তছনছ করে দিয়ে গেল। ঘরে আমার এক মামাতো ভাই ছিল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে, ওকে নিয়ে চলল- হলে ভাইকে খুঁজে দিতে হলে গিয়ে করছেন। তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে ভাইকে ঘরে নিয়ে এল। সামনে পড়া একজন দারোয়ানের কাছ থেকে একটা গামছা ছিনিয়ে নিয়ে চোখ বেঁধে তাঁকে নিয়ে চলল। বাসে উঠার আগে ভাই মামাতো ভাইটিকে বললেন, নুরুলকে বলিস টেলিফোন করতে।” স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন সাহেবের বোন। এ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অতি পরিচিত মুখ ইতিহাস বিভাগের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং মহনিস হলের ছাত্রদের অত্যন্ত আপন জন হাউজ টিউটর অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন সাহেবের বদর বাহিনীর হাতে মর্মান্তিক ভাবে হত্যার পূর্বকাহিনী। এর আগেও ২৭শে রমজান তারিখে গিয়াস উদ্দিন সাহেবকে, মহসিন হলের প্রভোষ্ট ওদুদুর রহমান এবং আর একজন হাউজ টিউটর জনাব জহুরুল হক সাহেবকে মিলিটারীরা এসে ধরে নিয়ে দুদিন কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এর কারণ যা পরে জানা গেছে হলের ইসলামী ছাত্র ংঘের ছাত্রদের যা ইচ্ছে তা করার প্রতিবাদে হল প্রশাসন নাকি তাদের সাথে সহযোগিতা করেননি। তারও আগে সেপ্টেম্বর মাসে গিয়াসউদ্দিন সাহেব যমদূত শিরোনামায় লিখিত একটি চরমপত্র পেয়েছিলেন। কিন্তু তা তিনি তখন ততটা আমল দেননি। মীর শাহাবুদ্দীন মাহমুদ দৈনিক বাংলা, ৬ জানুয়ারী, ১৯৭২ ডঃ আবুল কালাম আজাদ মেধাবী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিতগণিতে রেকর্ড ভাঙ্গা নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বর্ণপদক পান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আজাদ ফ্লাইং অফিসারের পদমর্যাদা নিয়ে অধ্যাপক হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমীতে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রশিক্ষণের জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। বিমান বাহিনীতে তার মেধা এবং কৃতিত্ব অবাঙ্গালীরা ভালো চোখে দেখেনি। এজন্যে তার চাকুরীর মেয়াদ তারা হঠাৎ শেষ করে দেয়। নিরুপায় হয়ে